ঢাকা মহানগরীতে মোটরসাইকেল চলাচল আরও নিরাপদ করতে এবং শব্দদূষণ কমাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বেশ কিছু কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা জানানো হয়। এতে বিশেষ করে আবাসিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে উচ্চমাত্রার হর্ন বাজানো এবং মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি যাত্রী বহন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, ঢাকা মহানগরীতে গাড়িচালকদের অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ও উচ্চমাত্রায় হর্ন ব্যবহার করতে দেখা যায়, যা নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে সরাসরি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
ডিএমপির মতে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই নগরবাসীর স্বার্থে এবং সড়কে শৃঙ্খলা আনতে অপ্রয়োজনীয় ও উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য চালকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, মোটরসাইকেলের চালকরা প্রায়ই হেলমেট ছাড়া একাধিক যাত্রী পরিবহন করেন, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং প্রাণহানি ঘটে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করলে তা তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে।
এ কারণে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ৪৯ (১) ধারার অধীনে মোটরসাইকেলে চালকসহ সর্বোচ্চ দুজন যাত্রী বহনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যাত্রীর জন্য হেলমেট নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই নির্দেশনা অমান্যকারী যেকোনো চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিয়ম অমান্যকারী চালক বা যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা কিংবা অন্যান্য শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং দুর্ঘটনা ও শব্দদূষণ কমানো।
ঢাকা মহানগরী বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি। এখানে সড়ক পরিবহনব্যবস্থা অত্যন্ত চাপের মুখে রয়েছে। যানবাহনের অতিরিক্ত সংখ্যা, অপ্রশিক্ষিত চালক এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলার অভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হর্নের শব্দদূষণ নগরবাসীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকায় হর্নের কারণে দৈনিক ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দদূষণ তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যসম্মত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে, মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত যাত্রী বহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর একটি। ডিএমপি-এর এই নতুন নির্দেশনা সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিএমপির নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে আইন মেনে চলার প্রবণতা বৃদ্ধি এবং সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে গণমাধ্যম, স্কুল, এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো জরুরি।
ডিএমপির এই উদ্যোগ সড়ক নিরাপত্তা ও নগরীর পরিবেশ উন্নত করতে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। যদি এই নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা যায়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা, শব্দদূষণ এবং নগরজীবনের মানের উন্নতি সম্ভব হবে। নগরবাসীর উচিত এসব নির্দেশনা মেনে চলা এবং ঢাকা মহানগরীতে একটি নিরাপদ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া।