বাংলাদেশের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন এবং চার নির্বাচন কমিশনার আগামী রোববার (২৪ নভেম্বর) শপথ নেবেন। সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ বিভাগ থেকে আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ওই দিন দুপুর দেড়টায় তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
নতুন নির্বাচন কমিশনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগ করে। এরপর প্রায় আড়াই মাস অপেক্ষার পর গতকাল অন্তর্বর্তী সরকার পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে।
নতুন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্যভাবে পরিচালনা করা। বিগত বছরগুলোতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে এই কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বিশাল।
এ এম এম নাসির উদ্দীন একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক এবং সুশাসন নিশ্চিতকরণে দক্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। সরকারি প্রশাসনে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নাসির উদ্দীন তার দায়িত্বশীলতা এবং নিরপেক্ষতার জন্য সুপরিচিত।
নতুন কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন:
1. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার: সাবেক অতিরিক্ত সচিব হিসেবে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
2. আবদুর রহমানেল মাসুদ: জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দীর্ঘ কর্মজীবনে বিচারিক স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন।
3. বেগম তহমিদা আহমদ: সাবেক যুগ্ম সচিব এবং নারী নেতৃত্বের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
4. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ: প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত পরিকল্পনায় দক্ষতা রয়েছে।
১. আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ তৈরি।
২. ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা এবং নতুন ভোটারদের নিবন্ধন নিশ্চিত করা।
৩. নির্বাচনের দিন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৪. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুষ্ঠু সংলাপ এবং মতবিনিময়ের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জন।
অন্তর্বর্তী সরকার এই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কমিশন যদি রাজনৈতিক চাপমুক্ত থেকে কাজ করতে পারে, তবে এটি দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
নতুন নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই আশা করছেন যে, নতুন কমিশন বিগত কমিশনের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে কমিশনকে কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে।