হবিগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ৯ জনের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৯ জনের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আবদুল আলীম এই নির্দেশ প্রদান করেন। এ নির্দেশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশের মাধ্যমে মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বানিয়াচং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তিনি আদালতে মরদেহ উত্তোলনের আবেদন করেন। বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই বিষয়টি অতি গোপনীয়তার সঙ্গে পরিচালিত হয়।
এই নির্দেশনার পেছনে রয়েছে গত ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া এক বেদনাদায়ক ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে বানিয়াচংয়ের সাগরদিঘীর পশ্চিমপাড় ঈদগাহ মাঠ থেকে হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মিছিল শুরু করে। গ্যানিংগঞ্জ বাজার ঘুরে বড়বাজার শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা থানার সামনে অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, থানা প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। পুরো ঘটনার মধ্যে সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহের সময় এক বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় একজন সাংবাদিক নিহত হন।
এছাড়া পুলিশের গুলিতে আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জন মারা যান। একই দিন বিক্ষুব্ধ জনতা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সন্তোষ চৌধুরীকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরদিন আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সব মিলিয়ে এই সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৯ জন।
নিহতদের পরিচয়
নিহত ৯ জনের নাম:
1. হোসাইন মিয়া (পিতা: মো. ছানু মিয়া)
2. মো. আশরাফুল ইসলাম (পিতা: মো. আব্দুন নূর)
3. মো. তোফাজ্জল হোসেন (পিতা: আব্দুর রউফ মিয়া)
4. মো. মোজাক্কির মিয়া (পিতা: মো. শমসের উল্লা)
5. মো. সাদিকুর রহমান (পিতা: মো. ধলাই মিয়া)
6. শেখ নয়ন হোসেন (পিতা: মৃত মো. আলী হোসেন)
7. সোহেল আখঞ্জী (পিতা: মৃত মোশাহিদ আখঞ্জী)
8. আকিনুর রহমান (পিতা: মৃত তাহের মিয়া)
9. মো. আনাস মিয়া (পিতা: মো. আবুল হোসেন)
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। নিহতদের পরিবার, পুলিশের পক্ষ এবং আহত এক ব্যক্তির বাবার পক্ষ থেকে মামলাগুলো করা হয়েছে। মামলাগুলোতে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, যা ঘটনাটির গুরুত্ব ও জটিলতা তুলে ধরে।
এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিলে ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। নিহতদের পরিবারের দায়ের করা মামলায় তদন্তের স্বার্থে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এই সহিংস ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।