যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার জন্য ড. ইউনূস ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন। এ বিষয়ে সম্প্রতি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ড. ইউনূস তাকে কড়া সমালোচনা করেন। তিনি ট্রাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণের মতো’ উল্লেখ করে বলেছিলেন, এতে তিনি এতটাই মর্মাহত যে তিনি কথা বলতে পারছেন না। পাশাপাশি হিলারি ক্লিনটনকে দেওয়া ইউনূসের দান নিয়েও নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে পরিস্থিতি বদলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূস এখন কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, “ড. ইউনূস এখন বাংলাদেশের নেতৃত্বে রয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব মাথায় রেখে তিনি সাবলীল কৌশল অবলম্বন করছেন।”
গত ৫ আগস্ট ছাত্র ও সাধারণ জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তখন থেকেই বাংলাদেশকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
৫ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃনির্বাচনের পর ড. ইউনূস তাকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। এতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আমি আগ্রহী।”
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “ড. ইউনূস দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকবেন। এটি উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।”
অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিএজি এশিয়া-প্যাসিফিকের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনির খসরু বলেন, “ট্রাম্প-ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ব্যবসা, উন্নয়ন, এবং প্রযুক্তি খাতে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও এ দেশটি গুরুত্বপূর্ণ।
ড. লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, “ড. ইউনূস অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনীতি পরিচালনা করছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি হয়তো বাংলাদেশের প্রতি বদলাবে না, তবে উভয় দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ রয়েছে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অতীতের দ্বন্দ্ব ভুলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য উভয়ের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।