যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী জয় সবসময়ই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর মার্কিন সমাজে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল, বিশেষত নারীদের মধ্যে। সেই ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে নারীরা বিভিন্নভাবে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি সেই বিরোধিতার অংশ হিসেবে অনেক মার্কিন নারী যৌন সম্পর্ক থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই প্রতিবাদমূলক পদক্ষেপটি মূলত একটি রাজনৈতিক বার্তা, যা নারীদের সম্মান এবং অধিকার রক্ষার দাবিতে গৃহীত হয়েছে। আন্দোলনটি শুধুমাত্র একটি ‘যৌনতা বর্জন’ নয়, বরং এটি নারীদের সম্মান রক্ষার প্রচেষ্টার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার করা বিভিন্ন মন্তব্য এবং আচরণ নারীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিশেষত, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং তার ‘অ্যাক্সেস হলিউড’ টেপে করা অশোভন মন্তব্য নারীদের মানসিকভাবে আহত করে। ট্রাম্পের বিজয়ের পর নারীরা তাদের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেছেন।
ট্রাম্পের বিজয়ের পরপরই শুরু হয় ‘উইমেন’স মার্চ’, যেখানে লাখো নারী ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আসেন। সেই প্রতিবাদই আজ নতুন রূপ নিয়েছে। ‘যৌনতায় না’ আন্দোলন মূলত একটি প্রতীকী প্রতিবাদ যা ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের প্রতি নারীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
মার্কিন নারীরা মনে করছেন, যখন রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বই নারীদের প্রতি অসম্মানজনক মনোভাব পোষণ করে, তখন সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারীদের প্রতি একইরকম আচরণ করা হতে পারে। তাই, তারা যৌনতা বর্জনের মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ এবং বিরোধিতা প্রকাশ করছেন।
‘যৌনতায় না’ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে নারীদের অবস্থান তুলে ধরা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে নারীরা একটি বার্তা দিতে চান যে, তারা আর পুরুষদের দ্বারা নির্যাতিত বা অপমানিত হতে চান না।
আন্দোলনকারীদের মতে, যৌনতা কেবলমাত্র শারীরিক সম্পর্ক নয়, এটি মানসিক ও সামাজিক সম্পর্কের প্রতীক। যখন পুরুষরা নারীদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেন, তখন সেই সম্পর্কের পবিত্রতা নষ্ট হয়। এই আন্দোলন সেই মানসিকতার বিরুদ্ধেই।
‘যৌনতায় না’ আন্দোলন সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কিছু মানুষ মনে করছেন, এটি নারীদের স্বাধীনতার চরম রূপ এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে চ্যালেঞ্জ করার একটি শক্তিশালী উদ্যোগ। অন্যদিকে, অনেকে এই আন্দোলনকে অতিরঞ্জিত ও অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন।
কিছু সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন, এ ধরনের আন্দোলন পুরুষ ও নারীর সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে। তবে আন্দোলনের সমর্থকরা বলছেন, এটি মূলত নারীদের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ।
অনেক নারীই এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তাদের মতে, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় বার্তা প্রেরণ করা প্রয়োজন।
লিসা কনরাড, একজন সমাজকর্মী বলেন, “আমরা আর পুরুষদের শর্তে আমাদের জীবন পরিচালিত করতে চাই না। আমাদের ইচ্ছা এবং সম্মান রক্ষা করতে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত।” অন্যদিকে, সারাহ হিউজ, একজন লেখক, মনে করেন, “এই আন্দোলন শুধু যৌনতা নিয়ে নয়, বরং নারীদের অধিকার, সম্মান এবং স্বাধীনতার প্রতীক।”
তবে, আন্দোলনের বিরোধীরাও কম নন। তারা বলছেন, যৌনতা বর্জন করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। রিচার্ড ব্ল্যাক, একজন মনোবিজ্ঞানী, মনে করেন, “এ ধরনের আন্দোলন সম্পর্কের মধ্যে আরও দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে এবং সমাজে বিভাজন বাড়াবে।”
অনেক পুরুষও এ আন্দোলনকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। তারা বলছেন, নারীদের সাথে সম্পর্ককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে, আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটি কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং একটি নীতিগত অবস্থান।
‘যৌনতায় না’ আন্দোলন হয়তো সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছাতে পারবে না, তবে এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে যে নারীরা আর তাদের অধিকার নিয়ে সমঝোতা করতে রাজি নন। এই আন্দোলন যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
নারীদের অধিকার রক্ষায় এ ধরনের আন্দোলন অতীতে পরিবর্তনের সূচনা করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে আশাবাদী নারীবাদীরা।
যদিও এই আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে এটি নারীদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।
‘যৌনতায় না’ আন্দোলন মার্কিন নারীদের ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের এক নতুন ধারা। এটি শুধুমাত্র ট্রাম্পের বিজয়ের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং নারীদের প্রতি অসম্মান ও অপমানের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘমেয়াদি লড়াই।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে নারীরা একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন যে, তারা আর পুরুষতান্ত্রিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে চান না। নারীদের এই আন্দোলন একটি নতুন সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করতে পারে যা ভবিষ্যতে লিঙ্গ সমতা এবং মানবাধিকারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।