পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা ও দিদারুল আলমের গ্রেফতার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য
খাগড়াছড়ির মামুন হত্যা মামলার আসামি ও পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে অস্থিরতার মূলহোতা মো. দিদারুল আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের দামপাড়া এলাকা থেকে বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দিদারুল আলম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধে ৪০টি মামলা রয়েছে এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন।
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সময়ে মামুন হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পুলিশ দাবি করেছে যে, দিদারুল আলম এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর থেকেই একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে, যার মধ্যে ১৫টির বেশি মামলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছিলেন, যা পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্ককে আরও খারাপ করে তুলেছে।
খাগড়াছড়ি জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মামুন হত্যাকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। স্থানীয়রা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গ করার চেষ্টা চলছে এবং দিদারুল আলমের গ্রেফতার তাদের আশঙ্কা কিছুটা হলেও কমিয়েছে। মামুন হত্যার পেছনে মূল ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্থানীয়রা আন্দোলন করছেন।
দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে ৪০টিরও বেশি মামলা থাকলেও এতদিন তিনি গ্রেফতার এড়িয়ে চলছিলেন। এই মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই সহিংসতা, হামলা এবং নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য দায়ের করা হয়েছে। তার রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় তিনি বারবার আইনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কারণ, যেখানে স্থানীয় সম্পদ, ভূমি অধিকার এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর দ্বন্দ্ব মূল ভূমিকা পালন করে। মামুন হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দিদারুল আলমের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দিদারুল আলমের গ্রেফতারের মাধ্যমে সাময়িক শান্তি আসলেও প্রকৃতপক্ষে এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলা সহজ হবে না। পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে বিদ্যমান এই বিরোধের সমাধান করতে হবে আরো সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে এবং প্রভাবশালী অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
দিদারুল আলমের গ্রেফতারের পর মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে যেসব অপরাধ করেছিলেন, সেগুলোর তদন্ত চলছে এবং শীঘ্রই বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। স্থানীয় জনগণকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধ আর বরদাস্ত করা হবে না।