কোয়েটা, পাকিস্তান – পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় এক ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোরে কোয়েটা রেলস্টেশন থেকে পেশোয়ারগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন রওনা হওয়ার মুহূর্তে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১৩ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কোয়েটার সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ অপারেশন মুহাম্মদ বালোচ। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী পুরো রেলস্টেশনটি ঘিরে ফেলেছে এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রেলওয়ে স্টেশনে প্রচুর মানুষ তখন উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তার আওয়াজ বেশ দূর থেকেও শোনা যায়। রেলস্টেশনের আসন, ছাদ ও পার্শ্ববর্তী স্থাপনাগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্কিত যাত্রীরা বিস্ফোরণের পরপরই নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যান।
মুহাম্মদ বালোচ বলেন, ‘‘পেশোয়ারগামী ট্রেনটি তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই রেলস্টেশনের ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটে।’’ তবে এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম এবং দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিস্ফোরণও এমন কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কার্যক্রম হতে পারে, যারা পাকিস্তানের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করতে চায়।
বিস্ফোরণের ঘটনার পর পাকিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি বা কার্যকলাপ লক্ষ্য করলে অবিলম্বে প্রশাসনকে অবহিত করতে আহ্বান জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। এর আগেও বিভিন্ন রেলস্টেশন, মসজিদ ও সরকারি স্থাপনায় এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পাকিস্তান সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে এবং সন্ত্রাস দমনে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে এবং আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া এ ঘটনার পেছনের দায়ীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য বিশেষ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোয়েটায় এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা পাকিস্তানের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে পুনরায় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিস্ফোরণের সঠিক কারণ অনুসন্ধানে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে সরকার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ভাবছেন। পাকিস্তান ইতোমধ্যে সন্ত্রাস দমনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তবে এই ধরনের নতুন হুমকি মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বোমা হামলার কারণ ও দায়ীদের শনাক্ত করতে চলছে তদন্ত।