যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ উত্থাপন করেছে, যেখানে ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সংযোগে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ইরানের একজন নাগরিক ফরহাদ শাকেরি ট্রাম্পকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, আইআরজিসি কর্তৃক নির্দেশিত হয়েই শাকেরি এ ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এই মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানায় বিচার বিভাগ, এবং সেই সংবাদটি পরে রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বিচার বিভাগের অভিযোগ এবং শাকেরির বক্তব্য
বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, ৭ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফরহাদ শাকেরি জানান যে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে, পরবর্তীতে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে এমন কোনো পরিকল্পনা তার ছিল না। তার মতে, আইআরজিসি-র নির্দেশে ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অংশীদার হওয়া বা সে পরিকল্পনা করা তার পক্ষে সত্য নয়।
শাকেরির জীবন এবং আইআরজিসি সংযোগ
৫১ বছর বয়সী ফরহাদ শাকেরি ইরানি বংশোদ্ভূত হলেও তিনি শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন। তবে তার অতীত জীবনে তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। ২০০৮ সালে ডাকাতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি ইরানে অবস্থান করছেন। এতে তার আইআরজিসি সংযোগ এবং তার পরিকল্পনার আরও কিছু জটিল দিক উন্মোচিত হয়।
নিউইয়র্কে সংশ্লিষ্ট দুই বাসিন্দার ভূমিকা
বিচার বিভাগ আরও জানায় যে, শাকেরি নিউইয়র্কের দুই বাসিন্দা, কারলিসলি রিভারা এবং জনাথন লর্ডহল্টের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতের পরে এই দুইজনের বিরুদ্ধেও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে তাদের আইনি প্রতিনিধি কোনো মন্তব্য না করায়, এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। যদিও ট্রাম্পকে লক্ষ্য করেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, প্রসিকিউটররা তাদের ষড়যন্ত্রের আসল লক্ষ্যকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি।
মসিহ আলিনেজাদের বিরুদ্ধে আগের অপহরণ চেষ্টার ইতিহাস
কিন্তু এ ঘটনায় একটি ব্যতিক্রমী ধারনা উঠে আসে, যাকে শাকেরি ও সহযোগীরা হত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ইরানি মানবাধিকারকর্মী মসিহ আলিনেজাদ। ইরানের নারীদের প্রতি নিপীড়নমূলক আইন এবং নারীর অধিকার প্রশ্নে মসিহ আলিনেজাদ এক অন্যতম কণ্ঠস্বর। এর আগেও ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে চারজন ইরানিকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০২২ সালে তার বাড়ির সামনে থেকে রাইফেলসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা ইরানি সরকারের প্রতি মসিহের সক্রিয় সমালোচনা এবং তার জীবনযাপনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিশেষজ্ঞ মতামত এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবং বৈরিতার ওপর আলোকপাত করে। ইরান এবং মার্কিন সরকারের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে নানা ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের হত্যাচেষ্টা, বিশেষত ট্রাম্পের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা ইরান-বিরোধী মানবাধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র করতে পারে।
এছাড়াও এই ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের কাছে তাদের কার্যক্রম নিয়ে আপত্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং তদন্তকারীরা এর পেছনে যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
আইনি ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যত পদক্ষেপ
এই মামলার বিরুদ্ধে শাকেরি এবং তার সহযোগীরা এখন আদালতের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর সাজা হতে পারে। তবে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে সত্য প্রমাণিত করা এবং তাদের সাজা নিশ্চিত করার জন্য প্রসিকিউটরদের কাছে আরও তথ্যের প্রমাণ জোগাড় করা প্রয়োজন। এ ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইরানের ভাবমূর্তির ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে ইরান সরকারের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে ইরান থেকে পূর্বে এ ধরনের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বৈরী প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়ে থাকে।