ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়: বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ডলারের আধিপত্য ও মুদ্রা বাজারের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও মুদ্রাবাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তার বিজয়ের খবর প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে মার্কিন ডলারের মূল্য অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা সারা বিশ্বের মুদ্রা ও পণ্যবাজারে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষত, ইউরো, পাউন্ড, রুপিসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান কমেছে, যা এই সময়কালের মধ্যে ডলারের এমন বিস্তৃত বৃদ্ধি এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
ট্রাম্পের জয়ের খবরের পরপরই ডলারের মান অন্যান্য প্রধান মুদ্রার তুলনায় বেড়ে গেছে প্রায় ১.৫ শতাংশ। এটি ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর ডলারের সবচেয়ে বড় উত্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে ইউরোপের ইউরো, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড, এবং জাপানের ইয়েনের তুলনায় ডলার শক্তিশালী হয়েছে।
বিশেষ করে ভারতের রুপির মান এ সময়ে ব্যাপক পতন দেখেছে। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী ট্রাম্পের জয় ভারতীয় অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে; ভারতীয় রুপি ডলারের বিপরীতে সর্বকালের সর্বনিম্ন মানে পৌঁছেছে, প্রতি ডলারের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে ৮৪.৩০ রুপি।
ট্রাম্পের নীতির ফলে মেক্সিকো এবং চীনসহ বেশ কিছু দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে। মেক্সিকান পেসোর মান কমেছে ৩.৩৬ শতাংশ, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রতি ডলারের বিনিময়ে এখন মেক্সিকোতে পাওয়া যাচ্ছে ২০.৭৭ পেসো। চীনের ইউয়ানও ১.২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ডলারের বিপরীতে ৭.১৮ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
জাপানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মান দাঁড়িয়েছে ১৫৪.৩৪, যা জুলাইয়ের পর থেকে সর্বোচ্চ। জাপানি অর্থনীতিতে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে, বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতির সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলিও জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ডলারের পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারেও তীব্র উত্থান দেখা গেছে। বিটকয়েনের দাম এক লাফে বেড়ে ৭৫,৩৭১ ডলারে পৌঁছেছে, যা বিটকয়েনের ১৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি সমর্থনের কারণে বাজারে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিটকয়েনের এমন বৃদ্ধি বাজারে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করছে যা ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে।
ডলারের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি নিয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভকে মুদ্রানীতিতে সুদের হার কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে যে, চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো ০.২৫ শতাংশ হারে সুদ কমানোর ঘোষণা আসতে পারে।