গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় যৌথ বাহিনীর এক সফল অভিযানে একজন ভুয়া সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনকে আটক করা হয়েছে। ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণায় অভিযুক্ত এই ব্যক্তির আসল নাম শাকিল আহমেদ খান। মূলত “ক্যাপ্টেন জাহিদ হাসান” পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। বহু থানায় তাঁর নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত গজারিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানোর পর যৌথ বাহিনী ভবেরচর এলাকা থেকে শাকিল আহমেদকে আটক করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল স্বীকার করেছেন যে তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন থানায় ফোন করে আসামি ছাড়ানোর জন্য সুপারিশ করতেন।
আটককৃত শাকিল আহমেদ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পিতার নাম সারোয়ার আহমেদ। জানা গেছে, শাকিল নিজেকে “ক্যাপ্টেন জাহিদ হাসান” হিসেবে পরিচিত করতেন এবং সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে থাকার দাবি করতেন। এই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি থানায় সুপারিশ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করতেন।
গজারিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার বলেন, “আমরা বেশ কিছুদিন ধরে এই ভুয়া ক্যাপ্টেনের কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলাম। অবশেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পর আমরা মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করি। আটক শাকিল আহমেদ প্রথম জিজ্ঞাসাবাদেই তাঁর প্রতারণার কৌশল স্বীকার করেছেন।”
অনেকেই এই ভুয়া ক্যাপ্টেনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। শাকিল সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে আছেন বলে দাবি করতেন এবং অনেক সময় সমস্যার সমাধান বা আসামি ছাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেকে তাঁকে বিশ্বাস করে অর্থ দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক বার্তা
ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে এই ধরনের প্রতারণা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় অনেকেই জানান, শাকিলের কর্মকাণ্ডে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করলেও যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তাঁরা সরাসরি অভিযোগ করতে পারেননি। আটক হওয়ার পর এলাকাবাসীসহ সকলে তাঁর প্রতারণার কথা জানতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, “আটককৃত শাকিল আহমেদকে থানায় আনার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার একাধিক অভিযোগ থাকায় আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ভুয়া পরিচয় দিয়ে কেউ যদি সরকারি বা সামরিক কর্মকর্তার পরিচয়ে আসে তবে দ্রুত প্রশাসনের কাছে তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, প্রতারণা প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় এই ভুয়া সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আটক হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রশাসন থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা রোধে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা প্রতিরোধে জনগণকে আরও বেশি সচেতন থাকতে বলা হয়েছে, যেন ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।