সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ থেকে ৩৫ করার দাবিতে শিক্ষার্থী এবং তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে সরকারকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই দাবিতে আন্দোলনরত ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ এ দাবির পক্ষে কথা বলেছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শরিফুল জানান, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে এ দাবিটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য তারা জোর অনুরোধ জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করা ছিল বহুদিনের প্রথা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে এটি ৩২ বছরে উন্নীত করা হয়, যা শিক্ষার্থী মহলের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর হলেও এই বয়সসীমাকে আরও বাড়ানোর জন্য দাবির আগুন কখনোই পুরোপুরি নিভে যায়নি। শিক্ষার্থীদের দাবির মূল কারণ হলো, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষা কার্যক্রমের দেরি, শিক্ষাজীবন শেষে পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া ইত্যাদি কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী চাকরির জন্য আবেদন করার পর্যাপ্ত সুযোগ পান না। ফলে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার আন্দোলনে নামে এবং এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলে আসছে।
৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের মতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর অন্তবর্তীকালীন সরকার বয়সসীমা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সুপারিশ কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি কিছুদিনের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে উপদেষ্টা কমিটিতে প্রেরণ করেন। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, ছেলেদের ক্ষেত্রে ৩৫ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার থেকে নতুন সিদ্ধান্ত আসে, যেখানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছরেই স্থির রাখা হয় এবং বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগও ৪ বার নির্ধারণ করা হয়।
৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের পক্ষে থেকে এই সিদ্ধান্তকে ‘প্রহসনমূলক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাদের মতে, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের হতাশার কারণ হয়েছে। ফলে তারা এখন সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অনেকেই বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে মত প্রকাশ করছেন। অনেক দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য বয়সসীমা ৩৫ বা তারও বেশি রাখা হয়েছে। বিশেষত, যখন শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, গবেষণা করেন এবং অনেকেই বিদেশ থেকে ফিরে এসে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে চান, তখন তাদের জন্য ৩২ বছরের বয়সসীমা বেশ সংকীর্ণ হয়ে যায়।
৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের দাবি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হলে আরও দক্ষ জনশক্তি সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়াও, শিক্ষা জীবনের দেরি এবং চাকরি বাজারের প্রতিযোগিতা ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে, শিক্ষার্থীদের আরো সময় দিয়ে তাদের সঠিকভাবে প্রস্তুত করার সুযোগ তৈরি হবে।
৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসে, তবে তারা পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর আন্দোলনে নামবেন। তারা বলেন, “আমাদের দাবি দীর্ঘদিনের এবং যৌক্তিক। সরকার যেহেতু বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন, তাই আমরা আশা করছি চাকরিতে প্রবেশের বয়সের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তারা আরও জানান, যদি সরকার এক সপ্তাহের মধ্যে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন না জারি করে, তবে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
বিভিন্ন সংগঠন এবং সুশীল সমাজের নেতারা এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন এবং চাকরি ক্ষেত্রে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হবে। একই সঙ্গে, এটি দেশের জনশক্তির মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের যুব সমাজের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার যদি তাদের দাবিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে, তবে এটি দেশের শিক্ষিত যুবসমাজের জন্য একটি আশার আলো জ্বালাতে পারে।