আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি। সোমবার (৪ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন দুই পর্বে বিভক্ত করার প্রথা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। এর মূল লক্ষ্য ছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য স্থান সংকুলানের সমস্যা সমাধান করা। তবে ২০১৮ সালে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর কিছু বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভেদ দেখা দেয়। এর ফলে তাবলিগ জামাত দুটি অংশে বিভক্ত হয়। বর্তমানে ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা এক পর্বে এবং বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা অপর পর্বে ইজতেমা পরিচালনা করেন।
বৈঠকে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে মাঠ হস্তান্তর ও প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিদেশি অতিথিদের ভিসা প্রদান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ, জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সরবরাহ, এবং আখেরি মোনাজাতের দিন যানজট নিরসন অন্যতম।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “আমরা চেষ্টা করছি যেন ইজতেমার সময় কোনো প্রকার অসুবিধা না হয়। তবে কোন পক্ষ আগে এবং কোন পক্ষ পরে ইজতেমা করবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
বিশ্ব ইজতেমা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সম্মেলন, যা প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ইজতেমার মূল আকর্ষণ আখেরি মোনাজাত, যেখানে লাখো মানুষ আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় সম্মেলন যা মূলত ইসলামি দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। ইজতেমার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইজতেমার সময় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, পরিবহন ও যানজট সমস্যা মোকাবেলায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদেশি অতিথিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিশ্ব ইজতেমা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইজতেমার মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং স্থানীয় মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ তৈরি হয়। এছাড়া, ইজতেমা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে।
বিভেদের মধ্যেও বিশ্ব ইজতেমা তার ঐতিহ্য ও গুরুত্ব ধরে রেখেছে। দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও উভয়েই ইজতেমার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে শান্তি, ধৈর্য, ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার এই আয়োজন শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। সংকট মোকাবিলা করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার মাধ্যমে ইজতেমা তার পূর্বের গৌরব ফিরিয়ে আনবে বলে আশাবাদী সবাই।