টাঙ্গাইলের সন্তোষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। পলিথিনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবিলা ও পরিবেশ রক্ষা করতে সরকারের নেওয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ৬ জন ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪৪ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়েছে।
রবিবার (৩রা নভেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানটি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের মাঝে সাড়া ফেলে। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও অনেক ব্যবসায়ী এখনো পলিথিন ব্যবহার করে চলেছেন, যা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ প্রেক্ষাপটে সন্তষ বাজারে পরিচালিত অভিযানে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করছেন এবং তাদের দোকানে মূল্য তালিকা নেই।
ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার জানান, এই ধরনের কার্যক্রম পরিবেশ ও ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। অভিযানের সময় মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে ৫ হাজার টাকা করে, মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাকে ২ হাজার টাকা করে এবং দীপককে আরও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি আরও বলেন, “ভোক্তাঅধিকার ও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করায় এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
পলিথিন ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পলিথিন জমে পানি নষ্ট করে, যা পরবর্তী সময়ে ড্রেনেজ সিস্টেমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়। পরিবেশবাদী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পলিথিন শুধু পরিবেশই নয়, বরং মানবস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। এর সংস্পর্শে আসলে ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
সাধারণ প্লাস্টিক বর্জ্য যেখানে প্রায় ৪০০ বছর সময় নেয় মাটিতে মিশে যেতে, সেখানে পলিথিন একবার জমা হলে এটি আরও বেশিদিন অক্ষত থেকে পরিবেশে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ায়। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে যেখানে শহরাঞ্চলে প্রতিদিন শত শত টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, সেখানে পলিথিন ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব অত্যন্ত গুরুতর।
জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ফারজানা আক্তার বলেন, “আমরা জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে চাই। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে এবং পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।” অভিযানে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চালানো হবে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযানের সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদেরও সচেতন করা হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, পলিথিনের সহজলভ্যতা এবং বিকল্প পণ্যের অভাবে তারা বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করছেন। ক্রেতারা জানান, পলিথিন ব্যাগের সহজলভ্যতা কমাতে হলে বিকল্প পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং পলিথিন ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
বাজারের অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পলিথিন বন্ধে একদিকে যেমন প্রশাসনিক কড়াকড়ি দরকার, তেমনি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারের সুযোগও সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা চান পাটজাত বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ থেকে তৈরি ব্যাগের সরবরাহ এবং ব্যবহার বাড়ানো হোক।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক তুহিন আলম বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি বাজারে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য। পলিথিনের জায়গায় জুট বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করলে পরিবেশের ওপর চাপ কমবে।”
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আগামীতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলার বিভিন্ন বাজারে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করা হবে। প্রশাসন আশা করছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ এবং ব্যবসায়ীরা পরিবেশ সম্পর্কে আরও সচেতন হবেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো এবং বিকল্প ব্যবহার উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও জনগণের সমর্থন প্রয়োজন।