ঢাকা, ২ নভেম্বর — রাজধানীর কচুক্ষেত ও মিরপুর-১৪ এলাকায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং পরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার ভাষানটেক ও কাফরুল এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন— আলমগীর, রেশমা খাতুন, মাহফুজ মিয়া, আমিনুল ইসলাম এবং কাজী রাসেল। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গতকাল সেনাবাহিনী প্রথমে তাদের আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করে। অভিযান চলমান থাকবে এবং এ ধরনের দুষ্কৃতীকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও আইএসপিআর নিশ্চিত করেছে।
গত ৩১ অক্টোবর, রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকায় কিছু গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। সড়কে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করায় মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে সেনানিবাসমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা। এ সময় আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন বলে জানা যায়। এক সময় উত্তেজনা তীব্রতর হলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে। এ সময় কিছু অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতিকারী সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আইএসপিআর তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঘটনার পর থেকেই দুষ্কৃতীকারীদের ধরতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু করা হয়। তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ভাষানটেক ও কাফরুল এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযান চলমান থাকবে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
স্থানীয়দের মধ্যে এই ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং দুষ্কৃতীকারীরা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতার সমস্যার সমাধান করা হলে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে। তারা আরও বলেছেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত না হলে এই ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। ফলে মালিকপক্ষ ও সরকারের উচিত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করা।
সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসন থেকে সাধারণ জনগণকে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।