আমদানি নির্ভরতার কারণে উৎপাদন বন্ধের মুখে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট গত বৃহস্পতিবার থেকে কয়লা সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন, এবং এটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গৃহীত একটি ঋণনির্ভর মেগা প্রকল্প। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের শুরুতে কয়লা আমদানির মাধ্যমে এই সংকট সমাধান সম্ভব হবে এবং উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, মাতারবাড়ি প্রকল্পে কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয় জাপানের সুমিতমো করপোরেশন, যা শেষবারের মতো গত আগস্টে সরবরাহ করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। এই কারণে নতুন কয়লা আমদানি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার বর্তমানে এই সংকট সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে এবং কয়লা আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই প্রকল্পে বেশ কিছু অনিয়ম ও আমদানি প্রক্রিয়ার জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, তিন বছরের জন্য কয়লা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলেও সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এক প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০ মাস দেরি করেছেন। এর ফলে অন্য এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হলেও দীর্ঘমেয়াদী আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে প্রকল্পটি।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, কয়লা সংকট এবং কিছু মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নভেম্বরের শেষ নাগাদ অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে।”
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। এই প্রকল্পটি জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে আমদানি নির্ভরতার কারণে প্রকল্পটি বারবার সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। যথাসময়ে কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত না হলে এই ধরনের প্রকল্পের উপর নির্ভরশীলতা দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।