বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান, যিনি ‘ভাইজান’ হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি একের পর এক প্রাণনাশের হুমকি ও মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি তাকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। মুম্বাই পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তদন্তে নেমেছে এবং সালমানের নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে। বলিউডের এই জনপ্রিয় তারকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তার ভক্ত থেকে শুরু করে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সবাই। চলুন এক নজরে দেখে নিই কী ঘটছে সালমান খানের জীবনে এবং প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিয়েছে।
খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি সালমান খানের কাছে ২ কোটি রুপি দাবি করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে একটি মুঠো বার্তা পাঠানো হয় মুম্বাই পুলিশের হেল্পলাইন নাম্বারে। এই বার্তায় বলা হয়, দাবি করা অর্থ না দিলে সালমানকে ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে হবে। বিষয়টি জানার পর মুম্বাই পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এর আগে গত মাসেই নয়ডা থেকে সালমান খানকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এ ঘটনা ছাড়াও, ২৪ বছর বয়সী এক সবজি বিক্রেতা শেখ হুসেন শেখ মহসিনকে মুম্বাই পুলিশ সম্প্রতি গ্রেফতার করে। অভিযোগ রয়েছে, মহসিন মুম্বাই ট্রাফিক পুলিশের হেল্পলাইনে সালমান খানের কাছে ৫ কোটি রুপি মুক্তিপণ দাবি করে হুমকি বার্তা পাঠান। পুলিশ এই তথ্য পাওয়ার পর বিষয়টি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখে এবং মহসিনকে গ্রেফতার করে। তবে এসব ঘটনার সূত্রপাত কোথায় এবং কেন এই হুমকির মুখে পড়েছেন সালমান, তা নিয়ে চলছে তদন্ত।
সালমান খান সম্প্রতি কিছু বিতর্কিত গ্যাংয়ের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ১২ অক্টোবর, মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় দশেরার সময় তিনবারের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন, কুখ্যাত বিষ্ণোই গ্যাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। বিষ্ণোই গ্যাং দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত।
সালমান খান ও বাবা সিদ্দিকীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে পুলিশ মনে করছে, এই গ্যাং সালমানের ওপরও নজর রেখেছে এবং হয়তো প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্যে তাকে হুমকি দিচ্ছে। এই গ্যাং এর আগেও তারকাদের হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করেছে বলে জানা গেছে।
হুমকির কারণে সালমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে তার চলাচল, দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র পুলিশ পাহারায় তার ঘর ও কাজের জায়গাগুলো নিরাপদ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে, তার ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাবধান থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুম্বাই পুলিশ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার থেকেও বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে।
মুম্বাই পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলছেন, এই হুমকিগুলো সালমানের জীবনের জন্য সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই নিরাপত্তার কোনো দিকেই প্রশাসন আপস করতে রাজি নয়। পুলিশ আরও জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চলাচলের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
হুমকির পর একাধিকবার সালমানের মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ধরনের চাপ তার ব্যক্তিগত জীবন ও কাজকর্মেও প্রভাব ফেলছে। সিনেমা শুটিং এবং অন্যান্য কাজ নিয়েও তাকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে, যা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তার ভক্তরা এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা সালমানের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া বলিউডের সহকর্মী এবং বন্ধুরাও তাকে সমর্থন জানিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলিউডের বিভিন্ন তারকা তাকে আশ্বাস দিয়েছেন এবং তার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সালমানের ভক্তরা তাকে বিভিন্ন বার্তায় সাহস যোগাচ্ছেন এবং তার সুরক্ষার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন।
সালমান খান বলিউডের অন্যতম সফল অভিনেতা, যার প্রতিটি সিনেমাই সাধারণত বক্স অফিসে সফল হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক হুমকির কারণে তার সিনেমা শুটিংয়ে দেরি হতে পারে এবং কিছু কর্মসূচি বাতিল করাও লাগতে পারে। সালমানের আসন্ন সিনেমাগুলোর শুটিং ও প্রচার পরিকল্পনাতেও এই হুমকি কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মুম্বাই পুলিশ এ ঘটনার গভীর তদন্ত চালাচ্ছে। পুলিশ সাইবার সেলকে এই ঘটনায় যুক্ত করা হয়েছে এবং হুমকি বার্তা যেখান থেকে পাঠানো হয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, পুলিশ বিশ্বাস করে যে বিষ্ণোই গ্যাং বা অন্যান্য কুখ্যাত অপরাধীরা এই ধরনের হুমকির পেছনে থাকতে পারে, তাই তারা সঠিক তথ্য উদঘাটনে সব ধরনের পন্থা অবলম্বন করছে।
পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে হুমকির পেছনে যে বা যারাই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং সালমানের নিরাপত্তায় কোনো আপস করা হবে না।
বর্তমানে সালমান খান এবং তার পরিবারের জন্য এ এক কঠিন সময়। তবে, বলিউডের ভাইজান নামে খ্যাত সালমান তার সাহসিকতা ও স্থিতিস্থাপকতার জন্য পরিচিত, যা তাকে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সহায়তা করবে। তবে এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র তার ভক্তদের নয়, বরং গোটা বলিউডকে নাড়িয়ে দিয়েছে। অভিনেতার ভক্তরা, বন্ধুবান্ধব এবং পুরো ইন্ডাস্ট্রি সালমানের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন এবং তার নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখছেন।
বলিউড তারকাদের নিরাপত্তা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রশাসনের উচিত এই ধরনের হুমকি মোকাবিলায় আরও সতর্ক ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।