গণঅভ্যুত্থান একটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এটি সমাজের চাপা কষ্টগুলোকে প্রকাশ করে এবং অনেক সময় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া এবং এতে আহত শিক্ষার্থীদের সহানুভূতিশীল ও মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গণঅভ্যুত্থানে আহত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। ২৯ অক্টোবর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। এটি কেবল মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা পাবেন। এর অর্থ হলো সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক আহত শিক্ষার্থী তাদের বেতন ও টিউশন ফি থেকে অব্যাহতি পাবেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, আহত শিক্ষার্থীদেরকে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রসহ আবেদন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ওই আবেদনগুলো যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফি মওকুফের ব্যবস্থা করবেন। এ সুবিধাটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের বর্তমান পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বন্ধন সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে এবং প্রমাণ করবে যে, সরকার শিক্ষার্থীদের দুর্দশা সম্পর্কে আন্তরিকভাবে সচেতন। একজন নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলির একটি হলো শিক্ষা, এবং এই শিক্ষাকে অব্যাহত রাখতে সরকার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের প্রেরণা দেবে এবং একই সাথে তাদের জীবনে প্রভাব ফেলবে।
এই সিদ্ধান্তটি দেশের তরুণ প্রজন্মকে দেখিয়ে দেয় যে, তাদের কণ্ঠস্বর সরকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং এটি পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তরুণদের ওপর অনেক দেশেই ভবিষ্যতের ভার থাকে, এবং তাদের উপর যত্নবান হতে পারলে দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। গণঅভ্যুত্থানের সময় আহত হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী হয়তো মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য নতুন উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করবে এবং তাদের শিক্ষার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগাবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি একটি নতুন দায়িত্ব। সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রদের কাছ থেকে ফি সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের আয় পরিচালনা করে। তবে সরকারের এই নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহত শিক্ষার্থীদের ফি মওকুফ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারও আশা করছে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করবে এবং আহত শিক্ষার্থীদের আবেদন দ্রুত অনুমোদন করবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উচিত এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা এবং যেসব শিক্ষার্থী গণঅভ্যুত্থানের সময় আহত হয়েছে, তাদের দ্রুত ও সহানুভূতির সঙ্গে সাহায্য করা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে গণঅভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের দাবিতে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছে। এই আন্দোলনগুলোর ফলে দেশের আইন ও নীতিতে পরিবর্তন এসেছে, যা জনসাধারণের কল্যাণে ভূমিকা রেখেছে।
গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিয়েছে এবং তাদের সাহসিকতায় বিভিন্ন সমাজ ও রাজনৈতিক স্তরে প্রভাব পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি থেকেছে এবং তাদের পরিবারও এ কারণে ভুগেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে এসব শিক্ষার্থীর পরিবারও কিছুটা স্বস্তি পাবে।
এই মওকুফের সিদ্ধান্তটি তরুণদের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা পাঠাচ্ছে। যারা নিজেদের শিক্ষা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ছিল, তাদের জন্য এটি সান্ত্বনা স্বরূপ। এখন শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিয়ে চিন্তা না করে তাদের শিক্ষা জীবনে মনোনিবেশ করতে পারবে।
গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের বেতন ও টিউশন ফি মওকুফের এই সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক পদক্ষেপ। এটি ছাত্রসমাজের জন্য একটি ইতিবাচক উদাহরণ এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। একই সাথে, এটি সরকারের মানবিক উদ্যোগেরও প্রতিফলন।