বাংলাদেশ পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একযোগে ৩৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপনে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে নির্দেশিত হয়েছে যে, বর্ণিত কর্মকর্তাদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নামের পাশে উল্লেখিত পদ ও স্থানে দায়িত্ব পালনের জন্য বদলি করা হয়েছে এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের অভ্যন্তরীণ পুনর্বিন্যাস ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কর্মকর্তাদের স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং কর্মকর্তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে এ ধরনের বদলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় থেকে কাজ করা অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য অঞ্চলে সেবার মান বাড়ানোর একটি কার্যকর কৌশল বলে মনে করা হয়। নতুন পরিবেশে বিভিন্ন কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মকর্তারা আরও দক্ষতার সাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে ৩৫ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জয়নাল আবেদীন, যিনি বর্তমানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বদলি হয়েছেন। নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেনকে অন্যত্র পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশিদকেও বদলি করা হয়েছে।
ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. জামিনুর রহমান খান, কুষ্টিয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু রাসেল, চট্টগ্রাম সিএমপির (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা, এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম নায়হানুল বারীও নতুন দায়িত্বে বদলি হয়েছেন।
এই বদলির তালিকায় আরও রয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ ও সানজিদা আফরিন। এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) এবং র্যাবের (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) কর্মকর্তারাও বদলির আওতায় আছেন। এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহমুদুল হাসান মামুন এবং র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল হাসানসহ অন্যান্য পুলিশ ইউনিটের কর্মকর্তাদেরও পদায়ন করা হয়েছে।
বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন। মিশন শেষে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে যোগদান করা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞা একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা, যিনি তার নতুন দায়িত্বে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন।
ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার বার্নাড এরিক বিশ্বাস এবং চট্টগ্রাম সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল হাসানও নতুন দায়িত্বে যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সার্কেলে যেসব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠানো হয়েছে, তারা সকলে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
একযোগে এত অধিক সংখ্যক কর্মকর্তার বদলি পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং পরিচালনা কৌশলে বেশ প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের বদলির মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজ আরও গতিশীল হবে বলে ধারণা করা হয়। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের মাধ্যমে কর্মকর্তারা নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজের প্রেক্ষাপট তৈরি করবেন, যা পুলিশ বিভাগে নতুন চিন্তাধারা ও নেতৃত্বের সমন্বয়ে সাহায্য করবে।
সরকারি প্রশাসনিক নীতিমালার আওতায় করা এই বদলি কার্যক্রম প্রমাণ করে যে, সুশাসনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনকে আরও উন্নত ও আধুনিক করে তোলা সম্ভব।