প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে। সঠিক চিকিৎসা পেলে কিছুদিনের মধ্যেই হাড় আবার জোড়া লাগে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই হাড় জোড়া লাগতে বিলম্ব হয়, যা রোগীদের জন্য এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ফ্র্যাকচার বা হাড় ভাঙার পর যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাড়ের পুনরায় সংযুক্তি না ঘটে, তাহলে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বিলম্বিত হাড় জোড়া লাগা (ডিলেইড ইউনিয়ন) এবং কখনো কখনো জোড়া না লাগা (নন–ইউনিয়ন) রোগীদের জীবনকে অসহনীয় করে তুলতে পারে।
হাড় ভাঙার পরে কেন বিলম্ব হয়?
হাড় জোড়া লাগার প্রক্রিয়া নির্ভর করে ফ্র্যাকচারের তীব্রতা, স্থান এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা ওপর। ফ্র্যাকচার হওয়ার পর যদি চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে হাড় জোড়া না লাগে, তবে তাকে ডিলেইড ইউনিয়ন বলা হয়। কিন্তু যদি ৯ থেকে ১২ মাস পেরিয়ে গেলেও জোড়া না লাগে, তখন তাকে নন–ইউনিয়ন বলা হয়।
ডা. মো. সাইদুর রহমান, চিফ কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, তেজগাঁও, ঢাকা জানান যে, “বিলম্বিত হাড় জোড়া লাগার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রোগীর বয়স, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, অপুষ্টি এবং সংক্রমণ অন্যতম।”
হাড় জোড়া না লাগার কারণসমূহ
বিলম্বিত হাড় জোড়া লাগার পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো:
- বয়স্ক রোগী: বয়স্কদের হাড় অনেক বেশি ভঙ্গুর হয় এবং তাঁদের অস্টিওপোরোসিসের সমস্যা থাকায় হাড় জোড়া লাগতে অনেক সময় লাগে।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় ভোগা রোগীদের হাড়ের পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলে।
- অপুষ্টি ও ধূমপান: অপুষ্টি এবং ধূমপান হাড়ের শক্তি ও গঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে হাড় জোড়া লাগার প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হয়।
- মেটাবলিক রোগ ও ঔষধের ব্যবহার: অতিরিক্ত ব্যথানাশক বা স্টেরয়েড ওষুধ গ্রহণের কারণে হাড়ের নিরাময় প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয়।
- রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত: হাড় জোড়া লাগার জন্য পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ প্রয়োজন। তবে রক্ত সরবরাহের কোনো সমস্যা হলে হাড় দ্রুত জোড়া লাগতে পারে না।
- সংক্রমণ: সংক্রমণ হাড়ের জোড়া লাগার প্রক্রিয়া ব্যাহত করে এবং অনেক সময় সম্পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
চিকিৎসা ও পরামর্শ
হাড় ফ্র্যাকচারের পর সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। চিকিৎসকরা সাধারণত হাড়ের জোড়া লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করেও সম্পূর্ণ জোড়া লাগানো সম্ভব হয় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ফিজিওথেরাপি ও ইলেকট্রো থেরাপি রোগীদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, মাইক্রো কারেন্ট থেরাপি বা বিশেষ মাত্রার ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন প্রয়োগের মাধ্যমে হাড়ের জোড়া দ্রুত নিরাময় সম্ভব। তবে এই চিকিৎসাপদ্ধতি কেবল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হলে প্রয়োগ করা উচিত।
দীর্ঘস্থায়ী ঝুঁকি ও প্রতিকার
ডিলেইড ইউনিয়ন এবং নন–ইউনিয়ন সমস্যার কারণে অনেক রোগী দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবন্ধকতায় ভুগে থাকেন। কেউ কেউ আজীবন পঙ্গুত্বের শিকার হয়ে পরিবার এবং সমাজের বোঝায় পরিণত হন। এজন্য ফ্র্যাকচারের পর সময়মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ডা. সাইদুর রহমানের মতে, “হাড় জোড়া লাগানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে রোগীদের মানসিক চাপও বেড়ে যায়, যা তাঁদের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য রোগীদের ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”
হাড় ভাঙার পর সঠিক চিকিৎসা না হলে বিলম্বিত হাড় জোড়া লাগা বা জোড়া না লাগার সমস্যার মুখোমুখি হওয়া রোগীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যাগুলোর সঠিক ও সময়মতো চিকিৎসা করা হলে রোগীরা তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সক্ষম হন। তাই প্রত্যেক ফ্র্যাকচার রোগীর উচিত নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, যেন তাঁরা স্থায়ী শারীরিক সমস্যার শিকার না হন।