সংবাদ প্রতিবেদন:
ঢাকা, ২২ অক্টোবর: হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক (ব্যারিস্টার সুমন) গ্রেপ্তার হয়েছেন। সোমবার (২২ অক্টোবর) দিনগত রাতে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ তাকে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। মিরপুর মডেল থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে আপাতত আসামি রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তাই তাকে পল্লবী থানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় বিস্ফোরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় থানার ভেতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় আসামিদের রাখার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সুমনকে পল্লবী থানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর রাত সোয়া একটার দিকে ব্যারিস্টার সুমন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। তিনি সেখানে লিখেন, “আমি পুলিশের সাথে যাচ্ছি। দেখা হবে আদালতে। দোয়া করবেন সবাই।”
ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মিরপুর এলাকায় সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ। সম্প্রতি মিরপুর মডেল থানায় একটি আন্দোলনের সময় থানার ভিতরে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে সুমনের নাম বিভিন্ন ঘটনায় আসছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর সুমনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে আদালতে হাজির করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। অপরাধ তদন্তের পরবর্তী ধাপ হিসেবে তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হতে পারে অথবা আদালত তাকে জামিন প্রদান করতে পারেন।
উল্লেখ্য, মিরপুর মডেল থানায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার। ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের সময় থানা ভবনে ভাঙচুর এবং কিছু জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকে থানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যায়। থানার নিরাপত্তা রক্ষায় নতুন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেখানে কিছু সময়ের জন্য আসামি রাখার ব্যবস্থা সীমিত করা হয়।
ব্যারিস্টার সুমনের গ্রেপ্তারের পর রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। তার সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি গ্রেপ্তার। অন্যদিকে, তার বিরোধীরা বলেছেন, আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত এবং কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া স্বাভাবিক।
সুমনের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তার সমর্থক এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকেই তার দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন, আবার অনেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ব্যারিস্টার সুমন একজন সমাজকর্মী এবং সামাজিক প্রচারণা ও আইনগত সহায়তার জন্য পরিচিত। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে কথা বলেন এবং আদালতে জনস্বার্থমূলক মামলা দাখিল করে থাকেন। তবে, তার বিরুদ্ধে আইন অমান্য করার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি হতে পারে। তবে, বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলমান এবং কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো তাড়াহুড়া হবে।