গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়ার কাছে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় ৩৩ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাতে এই হামলা চালানো হয়, যা গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, হামলার ফলে নিহতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ৬ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। তাদের দাবি, হামাসের সদস্যরা জাবালিয়া ও আশপাশের এলাকায় পুনরায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছেন। ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে আসছে যে, তারা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং হামাসের সদস্যদের নির্মূল করতে এ অভিযান চালাচ্ছে।
জাবালিয়ার শরণার্থী শিবিরে হামলার সময় ভারী বোমাবর্ষণের শব্দ শোনা যায় এবং এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণ ও সাইরেনের শব্দের কারণে বাসিন্দারা গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (ওসিএইচএ) জানায়, গাজার উত্তরাঞ্চলে সংঘটিত এই হামলা বেসামরিক মানুষদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে কঠোর পরিশ্রম করছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে আহতদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাও ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা প্রদান জরুরি হয়ে পড়েছে, তবে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এই সহায়তা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে।
এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণ ও হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং বেসামরিক মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজায় সংঘর্ষে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং উভয় পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংঘর্ষের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন, গাজায় অবরোধ, এবং হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষ ইত্যাদি বিষয়গুলো গাজার মানুষদের জন্য স্থায়ী সংকট তৈরি করেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে গাজার পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। ইসরায়েলি হামলা এবং হামাসের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ফলে বেসামরিক মানুষের জীবন চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষের রাজনৈতিক সমাধান বের করা অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে কূটনৈতিক সমাধান ও শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সংঘর্ষ নিরসনের প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন। শান্তি আলোচনায় উভয় পক্ষের মানবিকতা বজায় রাখা এবং বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি রোধে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা।
গাজার জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি এবং হতাহতের ঘটনা গাজা উপত্যকার স্থায়ী সংকটকে নতুন করে উন্মোচিত করেছে। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা এবং মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের জন্য বিশ্বনেতাদের একত্রে কাজ করতে হবে।
—