ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেট যৌথ বিবৃতিতে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার দাবি করেছে। ইসরায়েলি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, সিনওয়ারের মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা ও দাঁতের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে, যা তার মৃত্যুর বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি নিশ্চিত করে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজার একটি ভবনের নিচতলায় হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে এক সম্মুখ যুদ্ধে হামাসের যোদ্ধাদের পরাজিত করে। ইসরায়েলি সেনারা ওই ভবনে প্রবেশ করে হামাসের অন্যান্য যোদ্ধাদের পাশাপাশি সিনওয়ারের মরদেহও উদ্ধার করে। প্রথমে অনুমান করা হয়েছিল যে নিহত ব্যক্তিটি সিনওয়ার হতে পারেন, তবে ডিএনএ পরীক্ষা ও দাঁতের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।
আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযানে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে লক্ষ্য করে হামলা করা হয়নি। তিনি যে ভবনটিতে অবস্থান করছিলেন, তা জানা ছিল না। পরিস্থিতির আকস্মিকতায় তাকে পাওয়া যায় এবং তার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি সেনারা মূলত হামাস যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানোর সময় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর ইয়াহিয়া সিনওয়ার তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি হামাসের সামরিক কার্যক্রমের কৌশলগত নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের অভিযান পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। গত বছরের ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এ কারণে তিনি ইসরায়েলের কালো তালিকায় ছিলেন এবং ইসরায়েল বহুবার তাকে হত্যার অঙ্গীকার করেছিল।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হেলভি সিনওয়ারকে হত্যার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং সেই প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেন। সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘ইয়াহিয়া সিনওয়ার একজন সন্ত্রাসী এবং তাকে হত্যা করা ইসরায়েলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘ইয়াহিয়া সিনওয়ার ৭ অক্টোবরের হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন, যার জন্য তিনি দায়ী ছিলেন। তার জায়গা এখন অন্য সন্ত্রাসীদের পাশেই।’
এখনও পর্যন্ত হামাসের পক্ষ থেকে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ইসরায়েলের দাবি অস্বীকারও করেনি তারা। তবে সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের ভেতরে নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব ঘটাতে পারে এবং এটি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনে কীভাবে প্রভাব ফেলবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সিনওয়ারের মৃত্যু ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে, কারণ সিনওয়ার ছিলেন হামাসের অন্যতম প্রধান নেতা এবং তার মৃত্যুতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধ শুরু হতে পারে।
ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর মাধ্যমে হামাসের নেতৃত্বে একটি বড় পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতকে আরও তীব্র করার সম্ভাবনা রাখে। সিনওয়ারের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে নতুন রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।