ঢাকা, ১৬ অক্টোবর: দেশের প্রায় এক কোটি অতি দরিদ্র মানুষ প্রতিদিনই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করা ক্রমেই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ (বুধবার, ১৬ অক্টোবর) যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস, তখন খাদ্য অধিকার নিয়ে দেশে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য অধিকার।’
রাজধানীর বাংলামোটরে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক থেকে কম দামে চাল-আটা কিনতে এসেছেন অনেকে। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধা, যার দুই পা নেই। ঘন্টার পর ঘণ্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি এবং তার মতো আরো অনেকেই। সবার বক্তব্য একটাই, বাজারের আগুনে দাম সহ্য করতে না পেরে তারা টিসিবির ট্রাকের লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন, খাদ্য সংগ্রহের জন্য এই কষ্ট মেনে নিয়েছেন।
পুষ্টিবিদদের মতে, দেশে একদিকে যেমন উৎপাদন ক্ষমতা কমছে, তেমনি খাদ্যতালিকা থেকে পুষ্টিকর খাবার বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, “সুস্থ থাকার জন্য যেই পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন, তা অনেকেই পাচ্ছেন না। ফলে তাদের স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে।”
করোনার পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপণ্যের দামে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। ফলে কম দামে খাদ্য সংগ্রহের জন্য ওএমএস কর্মসূচির আওতায় থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু ইউসুফের মতে, “সরকারকে ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা আরও বাড়াতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের ব্যয় কমানো সম্ভব হয়।”
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, “অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে হার্ট এবং কিডনি সমস্যাসহ নানা রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, যা তাদের কর্মক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে।” স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে উৎপাদন ক্ষমতা এবং সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য দিবসে এই বাস্তবতা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, খাদ্য অধিকার শুধুমাত্র একটি মৌলিক মানবাধিকার নয়, বরং এটি একটি সুস্থ জীবনযাপনের পূর্বশর্ত। খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিশ্ব খাদ্য দিবসের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হতে পারে—সকলের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা এবং একটি উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।