ঢাকা, ১৫ অক্টোবর: শাকসবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে রাজধানীবাসী এবার মহাসংকটে পড়েছেন সহজলভ্য প্রাণিজ আমিষের উৎস ডিম নিয়ে। রাজধানীর অধিকাংশ বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানে ডিমের দেখা মিলছে না। কিছু দোকানে অল্প কিছু ডিম পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম অত্যন্ত চড়া। বিভিন্ন এলাকায় ডিমের ডজন ২০০ টাকা এবং প্রতি পিস ১৮-২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ডিম না থাকার কারণ সম্পর্কে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সরবরাহ সংকট এবং দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ডিমের বাজার তেজগাঁওয়ে ব্যবসায়ীদের ডাকা ধর্মঘটকে দায়ী করছেন তারা। জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রিতে অপারগতা প্রকাশ করে রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকেই তেজগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে ডিমের বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে।
তেজগাঁও রেলস্টেশন সংলগ্ন এই ডিমের বাজারে বন্ধ ছিল সব দোকান, কোনো ট্রাকও প্রবেশ করেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তার চেয়ে বেশি দামে খামার থেকেই ডিম কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা ডিম বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই বাধ্য হয়েই তারা বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডিমের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। কাঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের এক মুদির দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ডিম কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতারা। দোকানদার জানালেন, গত দুদিন থেকে ডিম নেই তার দোকানে। কারওয়ানবাজারেও ডিম পাওয়া যাচ্ছে না।
কিছু অস্থায়ী দোকানে হাঁসের ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে, তবে সেগুলোর দামও চড়া। হাঁসের ডিমের দাম বেড়ে প্রতিটি ২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এদিকে, কারওয়ানবাজারের খুচরা ডিমের দোকানগুলোতেও ডিমের দেখা মেলেনি।
ডিম সংকটের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সাম্প্রতিক বন্যার কথাও উল্লেখ করেছেন। বন্যার কারণে দেশের অন্তত আটটি জেলায় পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে ডিম উৎপাদনে। ডিম উৎপাদন পুনরায় শুরু হতে ছয় মাস সময় লাগতে পারে, যার ফলে এই অঞ্চলে ডিমের ঘাটতি রয়ে যাবে এবং অন্যান্য স্থান থেকে সরবরাহ করতে হবে।
পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টাঙ্গাইলের আড়তে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সা করে। এই ডিম ঢাকায় আনতে পরিবহন খরচসহ অন্যান্য ব্যয় যোগ হয়ে চড়া দাম হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
ডিম সংকটের কারণে রাজধানীর বাজারে এর প্রভাব বাড়ছে, এবং এর সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
সরকার, ডিম ব্যবসায়ী ও খামারিদের সমন্বয়ে দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছানোর মাধ্যমে সংকট উত্তরণ সম্ভব হতে পারে।