আ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কে এগিয়ে? ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ধনকুবেরদের সমর্থনের দৌড়ে কমলা হ্যারিস এগিয়ে রয়েছেন। যদিও অনেকেই মনে করেন, ধনকুবেরদের জন্য সুবিধাজনক নীতিমালার পক্ষে ট্রাম্পের অবস্থান থাকায় তিনি বেশি সমর্থন পাবেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এ পর্যন্ত ফোর্বসের তালিকায় থাকা শীর্ষ ধনীদের মধ্যে কমলাকে সমর্থন জানিয়েছেন ৭৬ জন, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ জন ধনকুবেরের সমর্থন।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক এই নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন। মাস্ক মূলত ব্যবসাবান্ধব নীতির জন্য ট্রাম্পের প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছেন। তবে ধনকুবেরদের মধ্যে সবাই যে ট্রাম্পের পক্ষ নিচ্ছেন, তা নয়। এই গ্রুপের অনেকেই নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন বা এখনো পর্যন্ত কাউকে সমর্থন জানাননি। বিশেষত জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেট, মার্ক জাকারবার্গ এবং বিল গেটসের মতো ধনীরা এ নির্বাচনে এখনো কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেননি।
কমলা হ্যারিসের প্রতি ধনকুবেরদের সমর্থন নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত করছাড়সহ বিভিন্ন ব্যবসাবান্ধব নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকেন, যা ট্রাম্পের প্রচারণার অংশ। তবে কমলার প্রতি ধনকুবেরদের সমর্থনের পেছনে বেশ কিছু কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি চিঠিতে ১২ জনেরও বেশি ধনকুবের কমলাকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন কমলা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্থিতিশীলতা এবং ব্যবসা-বান্ধব নীতিমালা তৈরি করতে সক্ষম। এছাড়া তারা কমলাকে এমন একজন নেতা হিসেবে দেখেন, যিনি একটি স্থিতিশীল এবং নিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করবেন, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উপকারী হবে।
ফোর্বসের তালিকা অনুসারে, কমলাকে সমর্থন দেওয়া ৭৬ জন ধনকুবেরের মধ্যে ২৮ জন আগস্ট মাসে কমলার প্রচারণায় কমপক্ষে ১০ লাখ ডলার করে অনুদান দিয়েছেন। এর বিপরীতে ট্রাম্পের প্রচারণায়ও ২৮ জন ধনকুবের সমপরিমাণ অর্থ অনুদান দিয়েছেন। ধনকুবেরদের কাছ থেকে পাওয়া এই অনুদান উভয় প্রার্থীর প্রচারণাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
যদিও বেশ কয়েকজন ধনী ব্যক্তি কমলা বা ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধনকুবের এখনও নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছেন। এই তালিকায় আছেন জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেট, মার্ক জাকারবার্গ এবং বিল গেটসের মতো শীর্ষ ধনীরা।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। তিনি এখনো পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি সমর্থন বা অনুদান দেননি। তবে, ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের জয়কে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখেছিলেন এবং ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তার বিরোধিতার ইতিহাস থাকলেও তিনি এবার কোনো পক্ষ নিচ্ছেন না।
বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ওয়ারেন বাফেটও এ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন জানাননি। তিনি ডেমোক্র্যাট হলেও, সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বা কারও পক্ষে কোনো বিবৃতি দেননি। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি তার কিছুটা সমর্থন থাকলেও তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়েছেন।
বিল গেটসও এ নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা গেটস কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন করেননি। তবে তার সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং কমলার প্রচারণায় ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন।
এই মুহূর্তে যত ধনকুবের তাদের সমর্থন বা অনুদান দিয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি। এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হবে, তখন জানা যাবে ধনকুবেরদের পূর্ণাঙ্গ অবদান।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ধনকুবেরদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কমলা হ্যারিসের প্রতি ধনকুবেরদের সমর্থনের পরিমাণ ট্রাম্পের চেয়ে বেশি হলেও, এখনও অনেক ধনী ব্যক্তি নিরপেক্ষ রয়েছেন। আগামী দিনে এই ধনীদের সিদ্ধান্ত ও সমর্থন নির্বাচনের ফলাফলে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।