শারদীয় দুর্গাপূজা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর এই উৎসবকে ঘিরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিশেষত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরও দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে ৩১৭ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় ২ হাজার পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় বিজিবির পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমান্তবর্তী ৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৩১৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পূজামণ্ডপগুলোর নিকটবর্তী এলাকায় বিজিবি সদস্যদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে ৮৮টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ৮৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। এই বেইজ ক্যাম্পগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেন অনধিক ১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে বিজিবি সদস্যরা যেকোনও পূজামণ্ডপে পৌঁছাতে পারে।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ব্যাটালিয়নে অতিরিক্ত দুই প্লাটুন করে সদস্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে, যাতে যেকোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। স্ট্যান্ডবাই রাখা এই বাহিনী যেকোনও মুহূর্তে মোতায়েন হতে প্রস্তুত থাকবে।
ঢাকা শহরের মন্দির ও পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা বিধানে বিজিবির ঢাকা সেক্টরের তত্ত্বাবধানে ৪ প্লাটুন বিজিবি সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী এবং পূজারীরা বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন। এই কারণে ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। গত কয়েক বছরে পূজামণ্ডপে নানান ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেমন সংঘটিত হয়েছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের কারণে অনেক বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এবারও বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, এপিবিএনসহ অন্যান্য বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। দুর্গাপূজা কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নয়, বরং সারা দেশের মানুষের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব। পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নয়, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব। পূজার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছে, যেন কোনও ধরনের গুজব বা অশান্তি ছড়ানো না হয়।
এ বছর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেল স্থাপন করে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের যৌথ মনিটরিংয়ের ফলে যেকোনও ধরনের হুমকি বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করা সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সারা দেশে ৩১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে এবার দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পূজামণ্ডপগুলোর কাছাকাছি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করে বিজিবির দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার মন্দিরগুলোর বিশেষ নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে।