খাগড়াছড়ি, ১২ অক্টোবর – সাম্প্রতিক সহিংসতা ও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত ধ্বংসের মুখে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য হলেও বর্তমানে জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো একেবারে জনশূন্য। শারদীয় দুর্গাপূজা এবং সাপ্তাহিক ছুটির মতো বড় ছুটির সময়েও পর্যটকদের দেখা নেই, হোটেল-মোটেলগুলো ফাঁকা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় পর্যটনকেন্দ্র আলুটিলা, রিসাং ঝরনা এবং জেলা পরিষদ পার্কসহ অন্যান্য স্থানগুলো এখন সুনসান নীরব। যদিও আগে এসব স্থানে বছরের এই সময়টাতে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমাতো।
খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধের মূল কারণ হলো সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুটি সহিংস ঘটনা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, এক বাঙালি যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরে ১ অক্টোবর, সোহেল রানা নামে এক শিক্ষকের গণপিটুনিতে মৃত্যু ঘটলে খাগড়াছড়িতে নতুন করে সহিংসতা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসন ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা পর্যটন শিল্পকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করেছে।
খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “এমন চলতে থাকলে পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। গত দুই সপ্তাহে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১০ কোটি টাকা।”
পর্যটনশিল্প খাগড়াছড়ির অর্থনীতির একটি প্রধান খাত। হোটেল-মোটেল ব্যবসা, পরিবহন, এবং কৃষিখাত পর্যটনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পর্যটক সমাগম বাড়লে স্থানীয় কৃষিপণ্য, বিশেষ করে পাহাড়ি ফলের চাহিদা বাড়ে। তবে বর্তমানে এই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। কৃষিপণ্যের চাহিদা কমে গেছে, এবং পরিবহন শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পর্যটক না আসায় অনেক হোটেল-মোটেল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ হয়ে গেছে এবং অনেক শ্রমিককে বেতন দিতে পারছেন না মালিকেরা। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল মানুষরা এ সংকটের দ্রুত সমাধান চান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আশ্বাস দিয়েছেন যে, শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, “চলমান অস্থিরতা কেটে যাবে, এবং পর্যটকরা আবার নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবে।”
খাগড়াছড়ির সুশীল সমাজ এবং ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে শীঘ্রই এ সংকট কাটিয়ে উঠবে এবং পর্যটন আবার স্বাভাবিক হবে। তবে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং সহিংসতা বন্ধ না হলে খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প আরও বড় ধাক্কা খাবে।