মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার কৃষক আবুল হোসেন এবারের মৌসুমে লাউ চাষ করেছেন। ফসলের দাম জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্ষেত থেকে লাউ বিক্রি করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। একই এলাকার আরেক কৃষক আবেদ আলী বেগুন, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শসহ বেশ কয়েকটি সবজি চাষ করেছেন। তারও একই অভিযোগ—পাইকারদের কাছে যা দাম পাওয়া যায়, তা দিয়ে লোকসান ছাড়া কিছুই নেই। আবেদ আলীর কথায়, ‘আমাদের যা দাম দেয়, তা দিয়েই বিক্রি করতে হয়।’
কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে প্রথমে ব্যাপারীরা নিয়ে যায় আড়তে, সেখান থেকে পাইকারের হাতে। এর পরেই ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে লাগে আরও কয়েকটি ধাপ। প্রতিটি ধাপে বাড়তে থাকে সবজির দাম। উদাহরণস্বরূপ, কৃষকের কাছে ২০ টাকার লাউ পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার হাত ঘুরে পৌঁছায় ভোক্তার কাছে ১২০ টাকায়!
অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে এই বিপুল মূল্যবৃদ্ধি। কৃষক পর্যায়ে লাউয়ের দাম ২০ টাকা থাকলেও প্রথম হাতবদলের পর তা হয়ে যায় ৪০ টাকা। একইভাবে, বরবটির ক্ষেত্রেও প্রথম পর্যায়ে দাম ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৬০ টাকা। ঢ্যাঁড়শ ৪৫ টাকার জায়গায় ৬০ টাকায় পৌঁছায়।
বেশ কিছুদিন ধরে দাবি করা হচ্ছিল মহাসড়কে চাঁদাবাজির কারণে সবজির দাম বাড়ছে। সময় সংবাদ অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাঁদাবাজির অস্তিত্ব নেই। ঢাকার কারওয়ান বাজারের পথে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোতে কোনো চাঁদা দিতে হচ্ছে না। ট্রাকচালকরাও নিশ্চিত করেছেন, এখন পথে কোনো চাঁদাবাজি হয় না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পৌঁছানোর পরেও সবজির দাম বাড়তে থাকে। এখানে একাধিক হাত বদলে প্রতিটি ধাপেই দাম বেড়ে যায়। আড়ত থেকে পাইকার, পাইকার থেকে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সবজি পৌঁছায় পাড়া-মহল্লার বাজারে। ফলে কৃষকের ২০ টাকার লাউ ভোক্তার হাতে এসে বিক্রি হয় ১২০ টাকায়।
কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ৫-৬ ধাপের হাত বদলের কারণে সাধারণ কৃষকরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু সিন্ডিকেটের হাত ধরে বাড়ছে সবজির দাম। ভোক্তাদেরও এর ফলে চড়া মাশুল দিতে হচ্ছে।
কীভাবে রোধ করা যায় এ মূল্যবৃদ্ধি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়াতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি ঠেকাতে কৃষকদের সরাসরি বাজারে পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাবও উঠে আসছে। তাতে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি ভোক্তারাও পাবেন কম দামে তাজা সবজি।
নিশ্চিত করতে হবে স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থাপনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা আনা গেলে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই এটি উপকারী হবে। সরকারেরও উচিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা।