অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে শেরপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। উজানে কিছুটা পানি কমতে শুরু করলেও নিম্নাঞ্চলের নতুন করে আরও ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে বন্যার বিস্তার আরও বেড়েছে, বিশেষ করে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত ১৪টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বানের পানিতে ডুবে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের মতে, এমন বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যার পরিস্থিতিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বন্যার পানিতে ইতোমধ্যে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে। নালিতাবাড়ীর খলিশাকুড়ির বাসিন্দা খলিলুর রহমান (৬৫), আন্ধারুপাড়ার ইদ্রিস আলী (৬৫) এবং ঝিনাইগাতীর সন্ধাকুড়ায় এক অজ্ঞাত ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছেন। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বন্যার এই ভয়াবহ অবস্থায় উদ্ধার কার্যক্রমে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে তারা দিনরাত পরিশ্রম করছে। তবে দূর্গম এলাকাগুলোর পরিস্থিতি এখনও গুরুতর। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাবার সংকট তীব্রতর হয়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, এবং কালভার্ট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সেসব এলাকায় চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে, যা মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় বিএনপি এরই মধ্যে দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে। জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যাকবলিতদের সহায়তায় ইতিমধ্যে ৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তবে এই সংকট মোকাবিলায় আরও খাদ্য এবং সাহায্যের প্রয়োজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলমান উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালু রয়েছে, এবং সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যার কারণে জেলায় ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে ডুবে গেছে এবং ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আবাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ৬০০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলো যৌথভাবে দুর্গতদের মাঝে রান্না করা খাবার এবং শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে। ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় এ কার্যক্রম চলমান থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বন্যার পানি দিন দিন বাড়তে থাকায় অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।