ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে বিচারাঙ্গনের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তৌফিকা করিমের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে, যারা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় প্রভাব খাটিয়ে আসামিদের ইচ্ছামতো রায় ও জামিনের ব্যবস্থা করতেন। এর ফলে বহু চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা সহজে জামিন পেয়ে যেতেন।
তৌফিকা করিমের ক্ষমতা ও প্রভাব
তৌফিকা করিম একাধারে আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং ব্যাংকার ছিলেন। তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আনিসুল হকের মা সিটিজেন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তার মৃত্যুর পর তৌফিকা করিমকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা হয়।
তৌফিকা করিমের প্রভাব বিচারাঙ্গনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাংকিং ও মিডিয়া সেক্টরে। জানা যায়, তার মালিকানাধীন একটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলের ৪০% শেয়ার রয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগ ও তদবির
তৌফিকা করিমের নেতৃত্বে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনজন জেলা জজ এবং পাঁচজন আইনজীবীকে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি প্রভাব খাটিয়েছেন। তাদের নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজায়ার।’
এ ছাড়া ফার্মার্স ব্যাংক দুর্নীতি মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাশেদুল হক চিশতীকে নিম্ন আদালত থেকে জামিন করানো হয়, যদিও উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এ ধরনের তদবিরের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আনিসুল হকের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজন যুক্ত ছিলেন।
পালাবদল ও আত্মগোপন
সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয় এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে। এদিকে, তৌফিকা করিম আত্মগোপনে চলে যান এবং গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি কানাডায় তার ছেলের কাছে পালিয়ে গেছেন। সেখানে তার বিপুল সম্পত্তিরও খোঁজ পাওয়া গেছে।
সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক ও তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই অভিযোগগুলো তদন্তাধীন রয়েছে। তাদের প্রভাব ও দুর্নীতির কাহিনী এখন বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক চাঞ্চল্যকর অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।