এলপিজি (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) এর দাম আবারও বাড়লো, যা ভোক্তা পর্যায়ে একটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়ে ১ হাজার ৪৫৬ টাকা হয়েছে, যা পূর্বে ছিল ১ হাজার ৪২১ টাকা। এ নিয়ে পর পর চার মাস ধরে এলপিজির দাম বেড়েই চলেছে। বুধবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ নতুন দাম ঘোষণা করে। সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, নতুন দাম আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হবে।
গত কয়েক মাস ধরেই এলপিজির দামে ক্রমাগত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর আগে আগস্ট মাসেও ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগের মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ৩৬৬ টাকা, যেখানে মাত্র ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এখনকার বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে বেশ বড়। এভাবে পর পর চার মাস এলপিজির দামে ক্রমাগত বৃদ্ধি সাধারণ জনগণের জন্য বাড়তি চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু ১২ কেজি নয়, অন্যান্য আকারের সিলিন্ডারের দামও বাড়ানো হয়েছে। নতুন মূল্য অনুযায়ী, ৫ কেজি, সাড়ে ১২ কেজি, ১৫ কেজি, ১৬ কেজি, ১৮ কেজি, ২০ কেজি, ২২ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৩ কেজি, ৩৫ কেজি এবং ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দামও সমন্বয় করা হয়েছে। বিশেষ করে গৃহস্থালী ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব স্পষ্ট হবে।
বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহৃত রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা এলপিজির দামও বাড়ানো হয়েছে। এই পদ্ধতিতে প্রতিকেজির দাম ১১৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে ১১৭ টাকা ৪৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে এলপিজি ব্যবহারকারীদেরও মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে হবে।
এছাড়াও অটোগ্যাসের দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা করা হয়েছে। অটোগ্যাসের দাম বৃদ্ধি গাড়িচালকদের জন্যও এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেহেতু যানবাহনের জ্বালানি খরচ সরাসরি তাদের জীবিকার সাথে যুক্ত।
যদিও ভোক্তা পর্যায়ে এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দামে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এই সিলিন্ডারের দাম আগের মতোই ৫৯১ টাকা রয়েছে, যা একমাত্র স্বস্তির খবর বলা যায়। তবে এর পরিমাণ এবং বিতরণ সীমিত হওয়ায় অধিকাংশ ভোক্তাই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন।
বিইআরসি জানায়, সৌদি আরামকো প্রোপেন এবং বিউটেনের সেপ্টেম্বর মাসের ঘোষিত সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) প্রতি মেট্রিক টনের দাম যথাক্রমে ৬২১ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলারে উঠেছে। এই সিপি’র ভিত্তিতেই প্রতি মাসে এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়। তাই সৌদি সিপি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের ভোক্তাদের জন্যও এলপিজির দাম বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
এই ধারাবাহিক মূল্য বৃদ্ধি ভোক্তাদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। গৃহস্থালির রান্নার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এই এলপিজি সিলিন্ডার এখন সাধারণ মানুষের জন্য ক্রমেই বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। রান্নার খরচ বাড়ার পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে দেখা যেতে পারে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এলপিজির দামে এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দামেও প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এলপিজির এই দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় কেমন প্রভাব পড়বে এবং ভবিষ্যতে কি ধরণের সমাধান গ্রহণ করা যেতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।