উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যার তাণ্ডব মোকাবিলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ত্রাণের অর্থ ব্যয় করার ঘোষণা এসেছে। দক্ষিণাঞ্চলের বন্যার সময় সংগৃহীত ত্রাণ তহবিলের একটি অংশ এবার উত্তরবঙ্গের দুর্গতদের জন্য ব্যবহৃত হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুনভাবে তাদের সহমর্মিতার নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয় যে, উত্তোলিত তহবিলের উদ্বৃত্তের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত মানুষের সাহায্যে ব্যয় করা হবে। ছাত্র প্রতিনিধিরা এবং স্থানীয় প্রশাসন একত্রে সমন্বয় করে এই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন। ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে শুষ্ক ও ভারী খাবার সামগ্রী, চাল-ডাল এবং তেলসামগ্রী গুরুত্ব পাবে।
কাদের আরও জানান যে, রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় পর্যায়ের ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ত্রাণ সমিতি গঠিত হবে। তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মিলে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এতে ঢাকায় অধ্যয়নরত রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা এই কার্যক্রমকে আরও সুসংহত করবে। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত ও কার্যকরভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য ছাত্র প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই ত্রাণ কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে শুরু হবে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক অবস্থায় সরকারের দেয়া সহায়তার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ তহবিল থেকেও অর্থ ব্যয় করা হবে। আবদুল কাদের জানান, এই তহবিলের একটি অংশ ভবিষ্যতে পুনর্বাসনের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে পুনর্বাসন তহবিল থেকেও ত্রাণ কার্যক্রমে অর্থ ব্যবহার করা হতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির মাধ্যমে উত্তোলিত তহবিলের একটি অংশ ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ব্যয় করা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। এই অবশিষ্ট অর্থের একটি অংশ এবার উত্তরবঙ্গের বন্যার্তদের জন্য ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি অর্থ ভবিষ্যতে বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ব্যবহার করা হবে।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয় যে, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমেও সংগঠনটি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নতুনভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণে সহায়তা করা, কৃষি কাজের জন্য বীজ ও সার সরবরাহ করা এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে পুনর্গঠনে সহায়তা প্রদান করা। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, এই পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে তারা যতটা সম্ভব তহবিল এবং মানবসম্পদ সংগ্রহ করবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগটি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ঢাকার শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং সক্রিয়ভাবে এই ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক এবং মানবিক সংগঠনও এই উদ্যোগে তাদের সহযোগিতা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গৃহীত এই উদ্যোগ একটি উদাহরণমূলক পদক্ষেপ। তারা শুধুমাত্র বন্যার ত্রাণ বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। সরকারের সহযোগিতায় এবং সাধারণ মানুষের সমর্থনে এই উদ্যোগ আরও প্রসারিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রমে তাদের দৃঢ় ভূমিকা উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত মানুষদের জীবনে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় একটি সফল মডেল হয়ে উঠতে পারে।