দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সব সম্পত্তির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশ অনুযায়ী দেশে ও বিদেশে এস আলম গ্রুপ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. রুকুনুজ্জামান। রিটে তিনি এস আলম গ্রুপের শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব স্থাবর সম্পত্তির তালিকা দাখিল করার নির্দেশনা চেয়েছেন। একই সঙ্গে, এস আলম গ্রুপের কোনো সম্পত্তি স্থানান্তর বা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয় রিট আবেদনে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ, বিদেশে পাচার করা অর্থ এবং সব স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
রিট আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এস আলম গ্রুপের ঋণ গ্রহণ, ঋণের বর্তমান অবস্থা এবং দায়ের পরিমাণ, বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়গুলোর তদন্ত ও তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, আদালতের অনুমতি ছাড়া এস আলম গ্রুপের পরিচালক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও আবেদন জানানো হয়।
এই রিট দায়েরের আগে, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে রিটকারী আইনজীবী মো. রুকুনুজ্জামান বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এস আলম গ্রুপ এবং তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু ঋণ গ্রহণ করেছে, তা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এ সংক্রান্ত নোটিশ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব, আইনসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের কাছে পাঠানো হয়।
তবে সেই আইনি নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে রিটকারী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালত এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে রিটটি গ্রহণ করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন।
এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যপণ্য, কৃষি, টেক্সটাইল, রিয়েল এস্টেট, ব্যাংকিং, এবং পেট্রোকেমিক্যালসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ রয়েছে।
এস আলম গ্রুপের ঋণ গ্রহণ এবং তাদের সম্পত্তির হিসাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে দীর্ঘদিন ধরে নানা আলোচনা চলছিল। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম গ্রুপ কী পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে, সেই তথ্য জানা না থাকায় সম্প্রতি বিষয়টি আরও বেশি আলোচনায় আসে। রিট আবেদনে এস আলম গ্রুপের ঋণ, দায় এবং বিদেশে পাচার করা অর্থের বিষয়ে তদন্ত ও হিসাব দাখিলের দাবিও করা হয়।
রিট আবেদনে এস আলম গ্রুপের সব সম্পত্তি বিক্রি বা স্থানান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। সম্পত্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে বা দেশের বাইরে অর্থ পাচারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। তাই রিটকারী আইনজীবী এই নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন, যাতে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
হাইকোর্টের এই আদেশ দেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষত, দেশের শিল্প খাতে বিনিয়োগ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে আসছে। এই আদেশের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি এবং ঋণসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হাইকোর্টের নজরদারিতে আসবে, যা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনসাধারণ ও সরকারের মধ্যে পরিষ্কার ধারণা তৈরি করতে পারে।
এই আদেশের ফলে এস আলম গ্রুপ এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছেছে। আদালতের আদেশে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তির তালিকা দাখিলের পর প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ আর্থিক কার্যক্রম এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আদেশ দেশের বাণিজ্যিক খাতের আর্থিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এখন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চার সপ্তাহের মধ্যে এস আলম গ্রুপের সব সম্পত্তির তালিকা হাইকোর্টে দাখিলের পর