গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করা শেখ হাসিনা, আজ ৭৮ বছরে পা দিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন শেষে এবার তার জন্মদিনটি পালিত হচ্ছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং দেশত্যাগের পরিণামে শেখ হাসিনার জন্মদিনকে ঘিরে নেই তেমন কোনো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন।
গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাধ্যমে জাঁকজমকভাবে পালিত হওয়া শেখ হাসিনার জন্মদিন, এবছর যেন নীরবতার চাদরে আচ্ছাদিত। গণতন্ত্রের পথে সরকার বিরোধী আন্দোলন, বিশেষত ছাত্র ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ, সরকারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে চলছে টানটান উত্তেজনা।
শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার ভারতে আশ্রয় নেয়া এবং দেশের ভেতরে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের উপর দমনমূলক কার্যক্রমের ফলে জন্মদিনের প্রচলিত আয়োজনগুলো এবার অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের আহ্বান জানানো হলেও, দুপুর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে কোনো উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান বা উদযাপনের খবর পাওয়া যায়নি। পোস্টে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি দেশের জনগণের প্রতি মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় প্রার্থনার আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া হলেও সেই আহ্বানে সাড়া দেয়ার প্রমাণ মেলেনি।
তবে, ব্যতিক্রম ছিল শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জ। বঙ্গবন্ধু কলেজ ক্যাম্পাসে দিনটি উপলক্ষ্যে কেক কাটার আয়োজন করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। যদিও পরে মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশের বাধায় তা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এদিকে, শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যকে আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে রিমান্ডে আছেন এবং দেশের বিভিন্ন আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিরোধী পক্ষের দাবিতে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জোরালো হচ্ছে।
বিগত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর থেকে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে অবস্থান করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপনের ঐতিহ্য এবার স্তিমিত হয়ে পড়েছে, যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিচ্ছবি।