নিউইয়র্ক, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ – বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। এই ভাষণটি বাংলায় প্রদান করা হবে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলা ভাষার এক গর্বিত উপস্থাপন হিসেবেও গণ্য হবে। জাতিসংঘের সদরদপ্তরে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৮টায়) এই ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
ড. ইউনূসের ভাষণের গুরুত্ব
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে বিশ্ব রাজনীতিতে চলমান জটিল পরিস্থিতি, বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকট এবং বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং কী কী উদ্যোগ নিয়ে দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার করতে চাচ্ছেন, তা এই ভাষণের মূল আলোচ্য বিষয় হবে।
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান এবং এই গণজাগরণ থেকে সৃষ্ট নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ববাসীকে অবহিত করবেন। তার মতে, এই অভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের জনগণের এক বিশাল বিজয়, যা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ ও জনগণের অধিকারের পক্ষে নতুন পথ তৈরি করবে।
বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের আহ্বান
ড. ইউনূসের ভাষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হবে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা এবং যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধ করার জন্য বিশ্ববাসীর সহযোগিতার আহ্বান জানাবেন। এছাড়াও, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা, নীতিনির্ধারক এবং কূটনীতিকদের সামনে ড. ইউনূস তার দেশ ও বিশ্বকে পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাবেন। তিনি একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান করবেন।
জাতিসংঘ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য: কাউকে পিছিয়ে রাখা নয়
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের এই বছরের প্রতিপাদ্য হলো “কাউকে পিছিয়ে রাখা নয়: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, টেকসই উন্নয়ন এবং মানব মর্যাদার অগ্রগতিতে একসঙ্গে কাজ করা”। এই প্রতিপাদ্যের আলোকে ড. ইউনূস তার ভাষণে মানবিক মর্যাদা, টেকসই উন্নয়ন এবং শান্তির প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন।
ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক অবস্থা এবং বিভিন্ন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্য করা একটি নৈতিক দায়িত্ব। তার মতে, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যেন কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠী পিছিয়ে না থাকে।
রোহিঙ্গা সংকট ও ড. ইউনূসের উদ্যোগ
ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানকেও তার ভাষণের একটি প্রধান বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করবেন। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবাধিকার সুরক্ষা এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, এই সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ইস্যু।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা: ড. ইউনূসের পরিকল্পনা
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বাংলাদেশে জনগণের জন্য একটি কল্যাণমুখী এবং জনস্বার্থে নিবেদিত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্রগতিশীল ও জনভিত্তিক সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে জনগণের কল্যাণ এবং তাদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। আমরা এমন একটি সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যা জনগণের জন্য নিবেদিত এবং বিশ্বমানবতার কল্যাণে কাজ করে।”
বৈশ্বিক নেতৃত্বে ড. ইউনূসের ভূমিকা
নোবেল বিজয়ী হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে শান্তি এবং সামাজিক কল্যাণে তার অবদান রাখার জন্য বিখ্যাত। ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তা একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
ড. ইউনূসের এই ভাষণ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। তার এই উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার বক্তব্য বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে।
উপসংহার
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘে বাংলায় ভাষ