ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪: দেশের প্রখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সবসময়ই সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সরব। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি ছাত্র আন্দোলন, জামায়াত, বিএনপি এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তার পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন তুলেছে, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ফারুকীর বক্তব্যে উঠে এসেছে ছাত্র জনতার আন্দোলন, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ, এবং সরকারের পতন নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ। তিনি খোলামেলা ভাষায় জানিয়েছেন, কীভাবে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো সরকার পতনের সুযোগ খুঁজেছে এবং সেই প্রেক্ষিতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হয়েছে।
নিউটনের সূত্র দিয়ে সমালোচনা শুরু
ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টের শুরুতেই উদাহরণ হিসেবে নিউটনের সূত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালে এসে কেউ যদি নিউটনের গতিসূত্র আবিষ্কার করে এবং সেই আবিষ্কারের আনন্দে ‘ইউরেকা ইউরেকা’ বলে চিৎকার করতে থাকে, তাহলে কি বলা যাবে?” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলন বা দাবি উঠেছে, সেগুলো নতুন কিছু নয় এবং এর পেছনে যে রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, সেটিও গোপন নয়।
ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা
ফারুকীর মতে, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই বিএনপি, জামায়াত, এবং বামপন্থী দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি বলেন, “ছাত্র জনতার আন্দোলনে জামায়াত ছিল না, এই কথাটা কে বলেছে কবে? বাংলাদেশের সবাই জানে এই আন্দোলনের প্রথম থেকে বিএনপি, জামায়াত, বাম দলসহ সকলের অংশগ্রহণ ছিল। সবাই একটা জিনিসই চেয়েছে, শেখ হাসিনার পতন।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেন, ছাত্র আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে এবং তারা সরকার পতনের লক্ষ্যেই এগিয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও কার্যক্রম নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।
সরকার পতনের ‘ওয়াটার টেস্ট’
ফারুকী তার পোস্টে উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী সরকার পতনের জন্য আন্দোলনকে ‘ওয়াটার টেস্ট’ হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, “নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোর আন্দোলন হয়েছে, কোটা আন্দোলনে নুরুদের নেতৃত্বেও একই জিনিস টেস্ট করে দেখেছে বাংলাদেশ।” তার মতে, এসব আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হলেও জিও পলিটিক্যাল বাস্তবতা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকার কারণে তারা সফল হতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের প্রতি পরামর্শ
ফারুকী আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আওয়ামী লীগের উচিত হবে ভাবা, কেনো সবাই তাদের পতন চেয়েছে। ক্লিয়ার?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরকারকে তাদের কর্মকাণ্ড পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দেন। তার মতে, দেশের সব মানুষ যদি একই লক্ষ্যে একত্রিত হয়, তবে সেটি সরকারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।
সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড়
ফারুকীর এই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ কেউ তার সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে জামায়াত ও বিএনপির আন্দোলনে অংশগ্রহণ নিয়ে তার মন্তব্যগুলো নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ফারুকীর বক্তব্য
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ফারুকীর বক্তব্য একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। তার মতামত বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক এবং সরকারের পতন নিয়ে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
কীভাবে তৈরি হবে ভবিষ্যতের রাজনীতি?
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফারুকীর মতামত বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও কৌশল নিয়ে তার বিশ্লেষণ বাংলাদেশের ভবিষ্যতের রাজনীতির রূপরেখা কেমন হতে পারে, সেটির দিকনির্দেশনা দেয়।