ভারতের বারাসাত আদালত সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর মামলায় ছয় জন অপরাধীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে, যারা নারীদের ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে পর্নোগ্রাফিক ভিডিওতে জোরপূর্বক অভিনয়ে বাধ্য করেছিল। ঘটনাটি ২০২১ সালে প্রথমবার আলোচনায় আসে, যখন একাধিক নারী এই চক্রের ফাঁদে পা দেন এবং পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, এই চক্রটি মূলত নারীদের অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার নাম করে ফাঁদে ফেলত। নারীরা ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের সুযোগের আশায় এই প্রস্তাবে সাড়া দিলে, তাদেরকে আস্তে আস্তে পর্নোগ্রাফিক ভিডিওতে অভিনয়ে বাধ্য করা হতো। অভিযোগে জানা যায়, যারা রাজি হতেন না বা এতে আপত্তি জানাতেন, তাদেরকে মাদক খাইয়ে অচেতন করে জোরপূর্বক পর্ন ফিল্মের শুটিং করানো হতো। পরে, সেই ভিডিও ব্যবহার করে নারীদের ব্ল্যাকমেইল করা হতো, যাতে তারা এ কাজ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ না পায়।
চক্রটি শুধু বারাসাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নিউটাউন, এবং বকখালিসহ একাধিক জায়গার নারীদের এই ফাঁদে ফেলে নিজেদের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেত। বহু নারী এমন প্রলোভনের শিকার হয়ে চক্রটির হাতে বন্দি জীবনযাপন করতেন, এবং তারা এই অন্যায় থেকে মুক্তি পেতে ব্যর্থ হতেন।
২০২১ সালে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে একের পর এক প্রমাণ পাওয়া যায় এবং চক্রের মূল হোতাসহ ৬ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তের সময়, পুলিশ আরও জানতে পারে যে, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নারীদের প্রতি এই ধরনের নির্মম আচরণ করে আসছিল এবং তাদের ভিডিওগুলো দিয়ে অর্থ উপার্জন করছিল।
তিন বছর ধরে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বারাসাত আদালত এই সপ্তাহে অপরাধীদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনে এবং প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে এই ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাদের প্রত্যেককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, নারীদের সঙ্গে এমন প্রতারণামূলক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
এই মামলাটি ভারতের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি নারীদের প্রতি সংঘটিত অপরাধের ভয়াবহ দিকগুলোকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং নারীবাদী সংগঠনগুলো আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে, তারা বলছে, নারীদের সুরক্ষার জন্য এমন শাস্তি অপরিহার্য।
মহিলাদের বিরুদ্ধে এমন ধরনের অপরাধ বন্ধে সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। তারা বলেছে, এই ধরনের অপরাধ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি। এছাড়াও, তারা দাবি করেছে, এমন অপরাধের শিকার নারীদের মানসিক পুনর্বাসনের জন্যও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এই মামলার রায় ভারতের নারী অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আদালতের তৎপরতার ফলে অপরাধীরা শাস্তি পেলেও সমাজে নারীদের সুরক্ষার জন্য ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য।