লেবানন আজ ভয়াবহ সংঘাতের মুখোমুখি। ইসরায়েলি বিমান হামলা ও হিজবুল্লাহর পাল্টা রকেট হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি চরম বিপর্যয়ে নিমজ্জিত। তিন দিনের তীব্র যুদ্ধের ফলে লেবাননে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২০ জনে, আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন, এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৯০ হাজারের বেশি মানুষ।
ইসরায়েলের দাবী ও হামলার কারণ:
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর শতাধিক ঘাঁটি এবং অস্ত্রাগারে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলের মতে, হিজবুল্লাহর কার্যক্রম তাদের দেশের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আরও জানান, হিজবুল্লাহর সামরিক অবকাঠামোকে দুর্বল করতে এই আক্রমণ অব্যাহত থাকবে এবং যেকোনো সময় স্থল অভিযানের প্রস্তুতিও চলছে।
ইসরায়েল উত্তর সীমান্তে আরও দুটি রিজার্ভ ব্রিগেড পাঠিয়েছে এবং সেখানে ট্যাংক ও ভারী অস্ত্রের সমাবেশ করেছে। এর মাধ্যমে তারা সম্ভাব্য স্থল অভিযানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছে।
লেবাননের অবস্থা:
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিমান হামলায় মৃত্যু ও আহতদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বেসামরিক জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনা। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে পালাচ্ছে।
বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, লেবাননের বিভিন্ন অংশে জরুরি ত্রাণ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে। তবে সংঘাতের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোও আহতদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে, এবং অনেক স্থানেই চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব দেখা দিচ্ছে।
হিজবুল্লাহর পাল্টা প্রতিক্রিয়া:
হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের এ হামলার পাল্টা জবাব দিতে রকেট নিক্ষেপ করে চলেছে। ইসরায়েলের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় এই রকেট আক্রমণের ফলে কিছু স্থানে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। তবে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে আরও বড় ধরনের প্রতিশোধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
এই সংঘাতের ফলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিভিন্ন দেশের নেতারা লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ শান্তির পথে এগিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়নি।
লেবাননের ভবিষ্যৎ ও মানবিক সংকট:
লেবাননের জন্য এটি একটি বড় মানবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিচ্ছে। মাত্র তিন দিনের সংঘাতে ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। যেসব এলাকায় হামলা হয়েছে, সেখানকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি পুনর্গঠন করতেও সময় এবং বিশাল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সংঘাতের ফলে লেবাননের অর্থনীতি এবং স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে রয়েছে, এবং সংঘাত যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শেষ কথা: