ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪: আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ভারতে ইলিশ রফতানির জন্য ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ২,৪২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তারের সই করা এক অফিস আদেশে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। তবে সরকারের পরিকল্পনা ছিল ৩,০০০ টন ইলিশ রফতানির, কিন্তু সব আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে ২,৪২০ টন ইলিশ রফতানি করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের ইলিশ মাছ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও চাহিদাসম্পন্ন একটি পণ্য। তবে, বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের চাহিদা বেশি হওয়ায় সরকার সাধারণত ইলিশ রফতানি নিষিদ্ধ করে রাখে। দুর্গাপূজার সময়ে ভারতীয় বাজারের জন্য বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে এই রফতানি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইলিশ রফতানির এই প্রথা চলে আসছে। তবে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে ইলিশ রফতানি কিছুটা নিয়মিত হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপরই ইলিশ রফতানি করা হবে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ধারণা করা হয়েছিল যে, ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ হতে পারে। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয়।
অনেক রফতানিকারক মনে করছেন, আগে থেকে রফতানির ঘোষণা না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান ইলিশ রফতানির প্রস্তুতি নিতে পারেনি। ফলে, এবছর সর্বোচ্চ ১,০০০ টন ইলিশ রফতানি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার জানিয়েছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্ট ঠিক ছিল, তাদেরকে ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা অফিস আদেশে রফতানিকারকদের জন্য আটটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। শর্তগুলো অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত পরিমাণের বেশি ইলিশ রফতানি করতে পারবে না। এ অনুমোদন আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৮টিকে ৫০ টন করে এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ইলিশ রফতানির অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আরিফ সি ফুডস, জারা এন্টারপ্রাইজ, সততা ফিশ ফিড, এস এ আর এন্টারপ্রাইজ, নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, রুপালী সি ফুডস লিমিটেড, লাকি এন্টারপ্রাইজ, টাইগার ট্রেডিং, রিপা এন্টারপ্রাইজ, জেবিএস ফুড প্রোডাক্টস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, মাশফি অ্যান্ড ব্রাদারস, মহিমা এন্টারপ্রাইজ, সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং কো. লিমিটেড, রহমান ইমপেক্স, আসিফ ইমপেক্স, নোমান এন্টারপ্রাইজ, যমুনা এগ্রো ফিশারিজ, রুপালী ট্রেডিং কর্পোরেশন, সততা ফিশ, প্যাসিফিক সি ফুডস লিমিটেড, জেজে ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বাস ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাপিটাল এক্সপোর্ট ইমপোর্ট অ্যান্ড কোং, অর্পিতা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সুমন ট্রেডার্স, সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, সততা ফিশ, আচল এন্টারপ্রাইজ, ২ এইচ ইন্টারন্যাশনাল, এম এ পি ইন্টারন্যাশনাল, সরদার এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট, ইউভা ট্রেডিং, ফারিয়া ইন্টারন্যাশনাল, আসফা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যান্ডার্ড ফুড কর্পোরেশন, জেএস এন্টারপ্রাইজ, পদ্মা এগ্রো ফিশারিজ, ন্যাশনাল এগ্রো ফিশারিজ, মেসার্স আহনাফ ট্রেডিং, নাফিজা এন্টারপ্রাইজ, ডিপ সি ফিশারিজ লিমিটেড, মাসুদ ফিশ প্রসেসিং, আরকে ট্রেডার্স, বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজ, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ এবং লোকজ ফ্যাশন। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লোকজ ফ্যাশনকে ২০ টন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন করে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইলিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যসম্পদ। স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে সীমিত আকারে রফতানি অনুমতি দেয়ায় দেশে ইলিশের ঘাটতি তৈরি না হয়ে বিদেশে এর মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়। ভারতের বাজারে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশের চাহিদা বাড়ে, তাই এই সময়ে ইলিশ রফতানি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হয়।
ইলিশ রফতানি বাংলাদেশের রফতানি খাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলেও, রফতানির ক্ষেত্রে সাধারণত কঠোর নীতিমালা প্রযোজ্য। দুর্গাপূজার সময়ে ভারতের বাজারের বিশেষ চাহিদা মেটাতে সরকার কিছু শর্তসাপেক্ষে এই মাছের রফতানি করে থাকে। তবে নতুন সরকারের নীতিমালায় পরিবর্তন হতে পারে বলে ধারণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়।
ভারতে ইলিশ রফতানি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, বিশেষত যখন এটি বিশেষ উৎসব উপলক্ষে করা হয়। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর শর্তাবলী এবং সরকারের নীতিমালা মান্য করে এই রফতানি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে এবং ভারতের বাজারে বাংলাদেশি ইলিশের চাহিদা পূরণ করবে।