কলম্বো, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪: শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, কারণ দেশটি তৃতীয়বারের মতো একজন নারীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরণ করেছে। শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) দলের সংসদ সদস্য ড. হরিণী অমরাসুরাইয়া মঙ্গলবার দেশটির ১৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। কলম্বোভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সরকারি সূত্রে এই খবরটি নিশ্চিত হয়েছে।
ড. হরিণী অমরাসুরাইয়া শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই শপথ নেননি, বরং তাকে শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আইন, শিক্ষা, শ্রম, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলির তত্ত্বাবধানে তিনি কাজ করবেন বলে জানা গেছে।
অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে নতুন প্রেসিডেন্ট
এই পরিবর্তনটি আসে শ্রীলঙ্কার নির্বাচনে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর। তিনি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে একটি নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
শ্রীলঙ্কার তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী
ড. হরিণী অমরাসুরাইয়া শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। তার আগে সিরিমাভো বান্দারনায়েকে এবং চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা এই মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ড. অমরাসুরাইয়া নারী অধিকারের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সমাজে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হন চার বছর আগে এবং সেই থেকে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।
অমরাসুরাইয়ার ভূমিকা ও নতুন মন্ত্রিসভা
শপথ গ্রহণের পর অমরাসুরাইয়া দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার পরিকল্পনার কথা জানান। বিশেষ করে লিঙ্গ সমতা, সংখ্যালঘু অধিকার, বেকারত্ব হ্রাস, শিশু সুরক্ষা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন নিয়ে তিনি কাজ করবেন বলে ঘোষণা দেন।
ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) দলের পক্ষে একটি বিবৃতিতে দলটির অন্যতম সদস্য নমল করুণারত্নে বলেন, “এই সরকারের মন্ত্রিসভা হবে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট। আমরা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে চাই।” করুণারত্নে আরও বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হতে পারে।
রাজনৈতিক সংকট ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
শ্রীলঙ্কা বর্তমানে একাধিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গত কয়েক বছর ধরে দেশটি ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং সামাজিক অস্থিরতা মোকাবিলা করে আসছে। ড. অমরাসুরাইয়ার নেতৃত্বে নতুন সরকার এই সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের পথে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ড. অমরাসুরাইয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। বিশেষ করে মানবাধিকার এবং নারী অধিকারের সংগঠনগুলো তার নিয়োগকে একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা এক নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক পথ অনুসরণ করবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা
ড. হরিণী অমরাসুরাইয়া তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের জনগণের আশা পূরণের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “আমরা শ্রীলঙ্কার মানুষদের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যত গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সকলের জন্য সমান অধিকার এবং সুযোগ থাকবে।”
শ্রীলঙ্কার জনগণ এই নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে চেয়ে রয়েছে, এবং ড. অমরাসুরাইয়া দেশের ভবিষ্যতের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেন, তা নিয়ে অনেকেই আগ্রহী।
শেষাংশে বলা যায়, ড. হরিণী অমরাসুরাইয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়া শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা জাগিয়েছে।