জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। বৈঠকটি বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর ১১টায় শুরু হওয়া এই বৈঠকে দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ড. ইউনূসের প্রেস অফিস থেকে নিশ্চিত করা তথ্য অনুযায়ী, এই বৈঠকটি প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী ছিল। বৈঠকের শুরুতে জো বাইডেন এবং ড. ইউনূস আন্তরিকভাবে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং কিছু সময় আলাপচারিতায় অংশ নেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিগত সরকারের আমলে দেশের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের সাহসী প্রতিরোধের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা ভবিষ্যতে দেশের অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জো বাইডেন এই শিক্ষার্থীদের ত্যাগ ও সাহসের প্রশংসা করে বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি উল্লেখ করেন, “যদি শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তবে আমাদেরও তাদের পাশে থাকা উচিত।”
বৈঠকের শেষে ড. ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একটি বিশেষ উপহার দেন, যা ছিল বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি-সংবলিত একটি আর্টবুক। বইটির নাম ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’, যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে তাদের সাহসী মনোভাব ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে। এই উপহার গ্রহণ করে বাইডেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং দেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তাদের অবদানের প্রতি সম্মান জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। এই অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার মাধ্যমে এটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সরাসরি সাক্ষাৎ।
এদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগত বিশ্ব নেতাদের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসও উপস্থিত ছিলেন। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজ সিংহ রূপুন, এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কসহ অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূস এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে আরও দৃঢ় করবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া ও সংস্কারমূলক কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, বৈঠকটি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা এবং দেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আশ্বাস বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থন এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের সঙ্গে কুশল বিনিময় ড. ইউনূসের সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী করবে।