জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম বার্ষিক অধিবেশনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সফরসূচিতে গরমিল ও সময়ের সংকটের কারণে এ বৈঠকটি বাতিল করা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ খবরটি নিশ্চিত করেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি (২৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মধ্যে কোনো বৈঠকের আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ ধরনের কোনো বৈঠক হবে না। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তবে সময়ের অভাব ও কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারায় এ বৈঠকটি বাতিল করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কিছু টানাপোড়েন রয়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পরিপ্রেক্ষিতে। এ বৈঠকটি বাংলাদেশ সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মোদির সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এই সম্পর্কের অবনতি রোধ করতে এবং শক্তিশালী করতে চেয়েছিল। তবে ভারতের দৃষ্টিতে এ বৈঠককে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল ব্যস্ততায় পূর্ণ। তিনি ২১ সেপ্টেম্বর ডেলাওয়ারে অনুষ্ঠিত কোয়াড লিডারস সামিটে অংশ নেন। ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার ভাষণও ছিল সফরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নরেন্দ্র মোদির এই সফরটি ছিল মাত্র ৫৫ ঘণ্টার, যার মধ্যে একাধিক কর্মসূচি ছিল নির্ধারিত। সেই কারণে অতিরিক্ত কোনো বৈঠক আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও নরেন্দ্র মোদির একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তবে সময়ের সংকটের কারণে সেটিও বাতিল করা হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তার যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে তার বিমান নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। নিউইয়র্কে কাটানো তিন দিনের মধ্যে কোয়াড লিডারস সামিট, জাতিসংঘের ভাষণ এবং অন্যান্য বৈঠক মোদির ব্যস্ত সফরের অংশ ছিল। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সফর অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিল। বাংলাদেশি উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনও নিউইয়র্কে পৌঁছাননি। দুই নেতার শিডিউল ভিন্ন হওয়ায় বৈঠকের কোনো সুযোগ হয়নি।”
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এ ধরনের বৈঠকের কোনো আয়োজন ছিল না। শেখ হাসিনা সরকারের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কিছু জটিলতা থাকলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এটি এখনই সমাধানের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যু নয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ ধরনের বৈঠককে এজেন্ডায় রাখেনি। মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল মূলত কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন ও জাতিসংঘে ভাষণকে কেন্দ্র করে, ফলে অতিরিক্ত কোনো বৈঠকের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
বৈঠকটি বাতিল হওয়া বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর সরাসরি কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুযোগ হারানো হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আগ্রহী ছিল।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে, যা বিভিন্ন ইস্যুতে জটিল হলেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বাইরে যে বৈঠকটি বাতিল হয়েছে, তা দুই দেশের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। উভয় দেশই ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চেষ্টা করবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম বার্ষিক অধিবেশনের সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক বাতিল হওয়া মূলত সফরসূচির গরমিল ও সময়ের সংকটের কারণে ঘটেছে। এই বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ আগ্রহী হলেও ভারতের সফরসূচির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।