ঝিনাইদহের সাধুহাটি মোড়ে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রাকের পেছনে মিনি ট্রাকের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন এবং একজন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে সকাল ৪টা ৫০ মিনিটে, যখন মিনি ট্রাকটি একটি স্থির থাকা ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিরা সবাই ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা।
নিহতরা হলেন ফরিদপুর জেলার সালতা থানার বড়-কাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান (৬৫) এবং একই উপজেলার ভাওয়াল গ্রামের ফারুখ মাতুব্বর (৪৫)। আহত ব্যক্তি, মতিয়ার রহমান, একই গ্রামের বাসিন্দা এবং তাকে গুরুতর অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত মতিয়ার রহমানের অবস্থা স্থিতিশীল নয় এবং তাকে বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে বলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার সময় চারজন একটি মিনি ট্রাকে করে ফরিদপুর থেকে মেহেরপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। তারা শাওতাল এলাকা থেকে কলা কিনতে মেহেরপুর যাচ্ছিলেন। যাত্রাপথে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের সাধুহাটি মোড়ে পৌঁছালে ট্রাকটি একটি স্পিডব্রেকার অতিক্রম করে এবং সামনের দিকে থাকা একটি বড় ট্রাকের পিছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে মিনি ট্রাকের সামনের অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঘটনাস্থলেই আনিছুর রহমান ও ফারুখ মাতুব্বর মারা যান।
দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক পালিয়ে যান। তাকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে। ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক তানভীর হাসান বলেন, “আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠাই এবং মৃতদেহগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।”
এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা মহাসড়কে ট্রাফিক আইন মেনে চলার গুরুত্বের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছেন। তারা জানান, মহাসড়কে ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের চলাচলকালে চালকদের আরও সতর্ক হতে হবে। এছাড়া স্পিডব্রেকার এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে, কিন্তু সঠিক পদক্ষেপের অভাবে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমছে না। স্পিডব্রেকার এলাকায় সতর্কতার অভাব এবং ট্রাক চালকদের অসচেতনতা বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি জানান, “আমরা ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ট্রাকচালককে খুঁজে বের করার জন্য আমরা অভিযান চালাচ্ছি এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ট্রাকচালকের অসাবধানতার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”
বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোতে ট্রাক ও মিনি ট্রাকের চলাচলের সময় যে ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে, তা প্রতিরোধে অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাসড়কে ট্রাফিক আইন প্রয়োগে আরও কড়াকড়ি করা, চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া, এবং যানবাহনের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সড়কে চলাচলকারী সকল যানবাহনের চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। এছাড়া মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নিয়মিত টহল এবং পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সমন্বয় প্রয়োজন।
এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে কিছু কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মহাসড়কে স্পিডব্রেকারের অবস্থান সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং সেখানে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে চালকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা দরকার।
এই দুর্ঘটনা মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার মনে করিয়ে দেয়। চালকদের সতর্কতা এবং প্রশাসনের নজরদারি ছাড়া এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক আইন মানা এবং চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হতে পারে।