গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটে এক তুমুল ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের পর। দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। সেই দিনেই তিনি সামরিক হেলিকপ্টারে করে প্রতিবেশী দেশ ভারত পালিয়ে যান, এবং এখনো পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছেন। হাসিনার দেশত্যাগের পর নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যা ইতিমধ্যে দেশের প্রধান খাতগুলোতে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত বিভিন্ন খাতে সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমে সাহায্য করতে তিনি যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “যাই হোক না কেন” অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করে যাবেন, যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
রয়টার্স জানিয়েছে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, যার ফলে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি নিশ্চিত হয়। বিক্ষোভের পরপরই শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনাগুলো সম্পূর্ণ করতে সেনাবাহিনী পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্পন্ন হওয়া উচিত। তিনি এই সময়সীমার মধ্যে ধৈর্য ধারণের ওপর জোর দেন এবং বলেন, এই সময়ের মধ্যেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে হবে। সেনাপ্রধান উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে তার নিয়মিত বৈঠক হয় এবং তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান।
জেনারেল ওয়াকার আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করলে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সফল হবে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব বজায় রাখা তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, এবং কোনো সৈনিক বা সেনা কর্মকর্তার কোনো অন্যায় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে তিনি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের রাজনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত হওয়া উচিত নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা উচিত, এবং সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। তার লক্ষ্য হলো সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব বজায় রাখা এবং সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক সংলগ্নতা থেকে দূরে রাখা। দীর্ঘমেয়াদে সেনাপ্রধান হিসেবে তার পরিকল্পনা হলো, সেনাবাহিনীকে এমনভাবে পরিচালনা করা, যাতে তারা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কাজে অবদান রাখতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপন করা
- সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনি সংস্কার
- অর্থনৈতিক খাতের পুনর্গঠন এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করা
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি এবং শিক্ষার্থীদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা
দেশের সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ব্যাপক আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং সরকারও দ্রুত সময়ে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো আগামী ১৮ মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এই লক্ষ্যে সরকার দ্রুত আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করছে। সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার একসঙ্গে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন নেতৃত্বের আওতায় দেশের সংস্কারমূলক কার্যক্রম গতি পেয়েছে। সামনের দিনগুলোতে দেশের জনগণের আশা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নিবদ্ধ থাকবে।