সিলেটে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে নগরীতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে ২৫৩টি, যার অধিকাংশই নারীদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। ২৫৩টি আবেদনের মধ্যে ১৩৯টি আবেদন এসেছে নারীদের তরফ থেকে। শুধু সিলেট জেলাতেই এই সময়কালে ২,১৩৯টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে নারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা পরকীয়া, পারিবারিক কলহ, শারীরিক অক্ষমতা এবং যৌতুকের মতো বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করছেন।
বিবাহবিচ্ছেদের নেপথ্যের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পরকীয়া সম্পর্ক। ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে বিয়ে করছেন, যা পরবর্তী সময়ে পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং পারিবারিক অনুশাসনের অভাবে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে বেশি। বিশেষ করে, নারীরা কর্মমুখী হয়ে নিজেদের ক্ষমতায়ন বাড়ানোর পরও পুরুষেরা তাদের শ্রমের যথাযথ স্বীকৃতি দেন না, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করছে। প্রেমের বিয়েতে সমবয়সী স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে ইগো সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। সামাজিক বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবার এবং আশপাশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন এবং জবাবদিহিতা থাকলেও প্রেমের বিয়েতে এই বন্ধন এবং জবাবদিহিতা কম।
নারীরা আগের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে বেশি সক্রিয় হলেও তাদের পারিবারিক দায়িত্ব এবং সমস্যার কারণে বিবাহবিচ্ছেদের দিকে ঝুঁকছেন। নারীদের অনেকেই শারীরিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য অত্যাচার এবং অর্থনৈতিক অক্ষমতার মুখোমুখি হচ্ছেন। সিলেটের একজন নারী ভুক্তভোগী জানান, তার স্বামীর একাধিক বিয়ের কারণে এবং তার পরিবারের ওপর অত্যাচারের ফলে তিনি বাধ্য হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবাহবিচ্ছেদ ঠেকাতে পারিবারিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। বর্তমান সমাজে দম্পতিরা একে-অন্যের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন এবং নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে চাইছেন, যার ফলে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে।