স্ট্রোক সাধারণত বয়স্কদের রোগ হিসেবে পরিচিত হলেও, বর্তমানে কম বয়সীদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের পাশাপাশি, শিশুদেরও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাবনাম মালিক দেশের এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
কেন কম বয়সীদের স্ট্রোক হয়?
কম বয়সীদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, দিনভর বসে থাকা, অতিরিক্ত জাংক ফুড খাওয়া, অল্প বয়সে ধূমপানের অভ্যাস এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
এছাড়া কিছু জন্মগত সমস্যাও স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। যেমন হার্টের ভাল্বের সমস্যা (মাইট্রাল স্টেনোসিস), বংশগত উচ্চ কোলেস্টরল, অটোইমিউন রোগ বা এসএলই রোগীরাও স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকে। রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে স্ট্রোক হতে পারে, বিশেষ করে আর্টেরিওভেনাস ম্যালফরমেশন এবং অ্যানিউরিজমের মতো মস্তিষ্কের রক্তনালির গঠনগত জটিলতার কারণে। ধূমপান এবং অ্যালকোহলের আসক্তি, স্থূলতা এবং অলস জীবনযাপনও তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
শিশুদের ক্ষেত্রেও স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে, যদিও তা তুলনামূলকভাবে কম। ময়াময়া রোগের মতো মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যায় পাঁচ থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদেরও স্ট্রোক হতে পারে।
স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
স্ট্রোক প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন। ধূমপান এবং মাদক থেকে দূরে থাকা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। বংশগতভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকলে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।
প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া যাদের একবার স্ট্রোক হয়েছে বা ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক (TIA) হয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।
অল্প বয়সীদের মধ্যে স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন, কারণ সঠিক লাইফস্টাইল অনুসরণ করে এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।