মোহাম্মেদ আদনান ইমাম, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক এবং এনআরবিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান, নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগে চরম বিতর্কিত। আদনান, যাকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ হিসেবে সিআইপি মর্যাদা দিয়েছে, মাত্র তিন বছরের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন। বিভিন্ন কাগুজে কোম্পানি খুলে শত শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তিনি এই অর্থ লোপাট করেন।
শ্বশুরবাড়ির গৃহকর্মী ব্যবস্থাপনা পরিচালক: ৪০০ কোটি টাকার আত্মসাৎ
আদনান ইমামের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বিস্ময়কর অভিযোগ হলো, শ্বশুরবাড়ির গৃহকর্মী মীর খোরশেদ আহমেদকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজিয়ে ‘টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি খুলে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া, সরকারি ১২০ কোটি টাকার কাজের বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পাচার করেছেন বিদেশে।
প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেট এবং অর্থ পাচার
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং ইউসিবি ও পদ্মা ব্যাংকের কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সহযোগিতায় আদনান ইমাম একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, যারা ব্যাংক এবং শেয়ার বাজার থেকে লোপাটকৃত অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বহু কোম্পানির মাধ্যমে দুবাই ও যুক্তরাজ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুদকের নীরবতা ও ক্ষমতাবানদের সুরক্ষা
আদনানের বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগের পরও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রভাবশালীদের কারণে তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়। ২০২১ সালে পাপুলের অর্থ পাচারের ঘটনার সাথেও তার নাম জড়ালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও আদনান ইমাম প্রভাবের কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।
কাগুজে কোম্পানি ও ব্যাংক ঋণ লোপাট
মোহাম্মেদ আদনান ইমামের নেতৃত্বে বিভিন্ন নামে-বেনামে খোলা ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়। তার কোম্পানি এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্ট বিডি লিমিটেড ৫৩০ কোটি টাকার একটি সরকারি কাজ পেলেও ৭০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়। কাজ শেষ না করেই পুরো ঋণের অর্থ তুলে বিদেশে পাচার করা হয়। এছাড়া তার অন্যান্য কোম্পানির নামে নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণও তিনি ফেরত দেননি।
আইনগত প্রতিকার: সংশ্লিষ্টদের অস্বীকার ও প্রমাণ লোপাট
এডব্লিউআরের আইন শাখার প্রধান বদরুল হাসান পাটোয়ারী এবং মীর খোরশেদ আহমেদ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। টিএসএন কোম্পানির ভুয়া দলিল ও জাল সই করার তথ্য পাওয়া গেছে, যা দুর্নীতির প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।
উপসংহার
মোহাম্মেদ আদনান ইমাম ব্যাংক ঋণ লোপাট, ভুয়া কোম্পানি, এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও, তিনি এখনো দেশের বাইরে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যা দেশের আর্থিক ব্যবস্থার জন্য এক চরম হুমকি।