ঢাকা জেলার দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের শিষ্য হিসেবে পরিচিত। গোলাপের সুপারিশে তিনি ইউএনও পদে নিয়োগ পান। এর আগে, তিনি ঢাকার তেজগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ঘটলেও, জাকির এখনো বহাল রয়েছেন।
তবে শুধু জাকিরই নন, মাঠ পর্যায়ে দলীয় পদপদবি ব্যবহার করে পোস্টিং নেওয়া অনেক কর্মকর্তাই আছেন, যারা এখনো সক্রিয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মকর্তার কারণে সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তিনি ৩৩তম বিসিএস প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদে প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে তার ব্যাচের অসংখ্য কর্মকর্তাকে পদোন্নতি-বঞ্চিত করেছেন। সর্বশেষ রাজউকে পোস্টিং নিয়ে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাভারের ইউএনও রাহুল চন্দ চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং রংপুর বিভাগের কমিশনারের পিএস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। নরসিংদী সদরের ইউএনও আসমা সুলতানা নাসরিন, দলীয় নেতাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন এবং ঢাকার গুলশান ও ধানমন্ডিতে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে জানা গেছে। ধামরাইয়ের ইউএনও খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন, কেরানীগঞ্জের ইউএনও মো. আবু রিয়াদ, ও মির্জাপুরের ইউএনও শেখ নুরুল আলমও একইভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ের বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনেক কর্মকর্তা দলীয় পদপদবি ব্যবহার করে নিয়োগ পেয়ে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করার সুযোগ নেই। প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা রাজনৈতিক পরিচয়ে পোস্টিং নিয়েছেন, তাদের মাঠ প্রশাসনে রাখা উচিত নয়।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।