মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হওয়া শোহান শাহ (২৯) দীর্ঘ ৩৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ২৭ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) শ্রীপুর সদরের আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ রোডে শোহানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবারের সদস্যরা শোকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শোহানের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন, আর তার বাবা অপলক চোখে তাকিয়ে আছেন। শোহানের স্ত্রী শম্পা বেগমের বিলাপ থামছে না।
শম্পা বেগম জানান, ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। শোহান ঢাকায় চাকরি করতেন, আর অর্থসংকটের কারণে তিনি একাই ঢাকায় থাকতেন। শোহান তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, “শম্পা, আমি আর তুমি এই নতুন ঘরে থাকব,” কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূর্ণ হলো না। শোহানের বাবা শাহ সেকেন্দার বলেন, শোহান ছিল স্মার্ট, কর্মঠ ও দায়িত্বশীল। বিয়ের পর থেকে তিনি কখনও বসে থাকেননি। চাকরি না থাকলেও রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করতেন।
জানা গেছে, শোহান মাগুরার শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে প্রায় ১০ বছর আগে চাকরি শুরু করেন। সবশেষ ঢাকার রামপুরা এলাকার একটি পোশাক কারখানায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তার পরিবারের সব খরচের জোগান আসত শোহানের একমাত্র আয় থেকে। গ্রামের বাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণ করছিলেন তিনি, যেখানে স্ত্রী শম্পার সঙ্গে সুখের সংসার পাততে চেয়েছিলেন।
গত ১৯ জুলাই ঢাকার রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শোহান। এরপর থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন সিএমএইচ-এ। অবশেষে ২৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ২৮ আগস্ট বিকেলে শ্রীপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল খালেকের করা মামলার এজাহারে ১৮ নম্বর আসামি হিসেবে শোহানের নাম উল্লেখ রয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ২৪ জুলাই শ্রীপুরের আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে জড়িত ছিলেন শোহান।
শোহানের বাবা শাহ সেকেন্দার দাবি করেছেন, তার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই তার চিকিৎসায় বাধা এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ করেন তিনি। তিনি এসব অপরাধের ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।