ঢাকা: দেশের দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও কালোটাকা উদ্ধারে শিগগিরই যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতিমধ্যে এই অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয় ও জেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানের ছক কষা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগপন্থি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ীদের অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই দেশ ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন, তবে অনেকেই পারেননি এবং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি জীবন রক্ষার্থে সরকারি হেফাজতে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৭ সালের ১-১১ এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেভাবে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, এবারও সেরকম কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তখন আতঙ্কে দুর্নীতিবাজরা রাস্তায় গাড়ি ও টাকার ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এর আগে, ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও দেশে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
তবে এবার এখনো সেই ধরনের কোনো অভিযান দেখা যায়নি। তবে, খুব শিগগিরই সন্ত্রাস দমন ও দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিলম্বিত অভিযান অপরাধীদের পালানোর সুযোগ করে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। তবে পত্রিকাটি জানিয়েছে, পলাতকদের ধরতেই এই অভিযানের ছক চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
আন্দোলনে হতাহতের ধোঁয়াশা: এদিকে, কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও বলপ্রয়োগের ফলে কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, কতজন আহত হয়েছেন, বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে হতাহতদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ই জুলাই থেকে ১১ই আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, ছাত্র আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
শহীদ ইনফো নামের একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আন্দোলনে নিহতদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত ৪৯০ জন নিহতের নাম-পরিচয় জানা গিয়েছে। সমকাল অন্তত ৬২২ জনের নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হতে পেরেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩৩ হাজার জন। আন্দোলনে নিহত অনেকের লাশ হাসপাতালে নেয়া হয়নি, কেউ কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত হয়েছে। বেশ কিছু লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের তথ্যমতে, ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় ৮৩ টি লাশ দাফন করা হয়েছে। রায়েরবাজার ও জুরাইন কবরস্থানে এই লাশগুলো দাফন করা হয়েছে। এছাড়া আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক ব্যক্তি এখনো ঘরে ফেরেনি। তাদের স্বজনরা হাসপাতালে খুঁজছেন। কিছু লাশ মর্গে পড়ে আছে, যেগুলোর কোনো দাবিদার পাওয়া যাচ্ছে না।